চট্টগ্রাম ইপিআরটিসি বাস অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)
চট্টগ্রাম ইপিআরটিসি বাস অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালিত হয় ২৮শে অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টায় নিউ মার্কেট এলাকায় ইপিআরটিসি (ইস্ট পাকিস্তান রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন)-র একটি বাসে। এ অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রামের জনজীবন স্বাভাবিক বলে পাকিস্তানিরা যে দাবি করছিল, তা অসত্য প্রমাণ করা এবং পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলা। অপারেশনের দলনেতা ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আহমেদ উল্লাহ, জাকারিয়া আহমেদ মিনার, ফিরোজ ও প্রবীর। চারদিকে পুলিশ ও পাকসেনা পরিবেষ্টিত একটি জায়গায় প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা এ অপারেশনটি পরিচালনা করেছিলেন।
এ অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা একটি ফিয়েট গাড়ি, ৪টি গ্রেনেড, ৪টি স্টেনগান, ৪টি স্পোক বোমা, ৪টি লোডেড ম্যাগাজিন, ৪টি ফসফরাস বোমা ও পেট্রোল ব্যবহার করেন। তাঁরা অস্ত্রের মুখে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রী, হেলপার ও ড্রাইভারকে নামিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। আগুনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সামান্য আহত হন। মুক্তিবাহিনী এ কাজ করছে এটা বুঝতে পেরে পাকসেনা ও পুলিশ বাহিনী তাঁদের ধাওয়া করে। তবে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিশেষকরে এর -চরমপত্র- অনুষ্ঠানে এ অপারেশনের খবর গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হয়। অপারেশনের অপারেশনের পরে নিউমার্কেটের আশপাশের সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। সারা শহরে পরিবহণ চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সাধারণ যাত্রীরা ভয়ে ইপিআরটিসি-র বাসে যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকে। সরকার সেনাসদস্যদের প্রহরায় বাস চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারপরেও চট্টগ্রাম শহরের জীবনযাত্রা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। অপারেশনটি ছোট হলেও তার সাফল্য মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় এবং পাকসেনা ও তাদের দোসরদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। [সাখাওয়াত হোসেন মজনু।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড