চট্টগ্রাম নেভি হেডকোয়ার্টার্স অপারেশন (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রাম নেভি হেডকোয়ার্টার্স অপারেশন (চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ২৩শে নভেম্বর। এর উদ্দেশ্য ছিল পাকবাহিনীর জনবল বৃদ্ধির জন্য রাজাকার- নিয়োগ বন্ধ করা। ২৪শে নভেম্বর চট্টগ্রাম নেভি হেডকোয়ার্টার্সে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে উল্লেখ করে পাকবাহিনী বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও চট্টগ্রাম স্টিল মিলের চাকুরে আবুল কাসেমের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর জানতে পারেন। তাঁরা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার সিদ্ধান্ত নেন। দু-দফায় নেভি হেডকোয়ার্টার্সে প্রয়োজনীয় রেকি সম্পন্ন করা হয়। এ-ক্ষেত্রেও আবুল কাসেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অবশেষে ২৩শে নভেম্বর রাতে অপারেশন পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের মূল লক্ষ্য ছিল নেভি হেডকোয়ার্টার্সে অবস্থিত বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটার ধ্বংস করা। এ উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমান রাতের অন্ধকারে লোহাকাটা করাত দিয়ে ড্রেনের মুখের লোহার জাল কেটে ট্রান্সমিটার কক্ষে প্রবেশ করেন এবং যথাস্থানে পর্যাপ্ত বিস্ফোরক স্থাপন করেন। তারপর তাঁরা নিরাপদ স্থানে চলে আসার পর প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ট্রান্সমিটার বিধ্বস্ত হয় এবং সমগ্র ন্যাভাল বেইজে অন্ধকার নেমে আসে। সাইরেনে বিপদ সংকেত বেজে ওঠে। বিস্ফোরণের শব্দ এবং বিপদ সংকেতে পুরো এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পরদিনের রাজাকার নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ অপারেশনে বিভিন্নভাবে আরো যাঁরা অংশগ্রহণ করেন তাঁরা হলেন- জাহিদ, শফি, এয়াকুব, গনি, জমির প্রমুখ।
পাকবাহিনীর নৌ সদর দপ্তরে সাফল্যজনকভাবে এ অপারেশন পরিচালনা করা গেরিলা যোদ্ধাদের এক বিরাট কৃতিত্ব ছিল। নভেম্বর মাসের শেষদিকে নেভি হেডকোয়ার্টার্স গেরিলাদের দ্বারা বিপর্যস্ত হওয়ায় পাকবাহিনীর কাছে এ বার্তা পৌঁছে যায় যে, তাদের পতন আসন্ন। এই গেরিলা আক্রমণের সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। বিবিসি ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমও মুক্তিযোদ্ধাদের এই সফল অপারেশনের খবর গুরুত্বসহকারে প্রচার করে। [সাখাওয়াত হোসেন মজনু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড