You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.23 | চকদলু গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

চকদলু গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর)

চকদলু গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ২৩শে এপ্রিল। এতে ১৯ জন সাধারণ লোক শহীদ হন। পাকহবাহিনী এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নবাবগঞ্জ উপজেলা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তাদের সহযোগিতায় রাজাকার ( স্থানীয়দের কাছে জোলা নামে পরিচিত) বাহিনী এগিয়ে আসে। এদিকে নবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যুবকরা দলে-দলে সংগঠিত হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ২নং বিনোদনগর ইউনিয়নের চকদলু (নারায়ণপুর) গ্রাম থেকেও বেশকিছু যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে ভারতে যায়। এ গ্রামের রাজাকাররা তাদের খবর পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অর্থ-সম্পদ লুট করে তাদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করে। ফলে গ্রামের প্রায় অধিকাংশ সংখ্যালঘু জনগণ প্রাণভয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যায়।
রাজাকার বাহিনী চকদলুতে আওয়ামী লীগ-এর সমর্থকদেরও খুঁজে খুঁজে নির্যাতন শুরু করে এবং হানাদার বাহিনীর কাছে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে চকদলুর মানুষজন তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাতে বাধাগ্রস্ত হয়। যারা ছোট-খাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করত, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নেয়। কৃষকরা মাঠের পাকা ধান তুলতেও সাহস পাচ্ছিল না। তারা আশঙ্কা করছিল কখন পাকবাহিনী গ্রামে আক্রমণ চালায়। এরূপ পরিস্থিতিতে ২৩শে এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে রাজাকার বাহিনী চকদলুর হিন্দুপাড়ায় প্রবেশ করে। তাদের দেখে গ্রামের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে। যারা মাঠে কাজ করছিল। তারা পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। রাজাকাররা তাদের ঘরে-ঘরে তল্লাশি চালায়। ঐ সময় নবাবগঞ্জের পালপাড়ার বেশকিছু হিন্দু পরিবার জীবনের ভয়ে পালিয়ে এসে হিন্দুপাড়ার পাশে হাজি মসিরউদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ঘটনার দিন হাজিসাহেব বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলেন। এই সুযোগে তার বাড়ি থেকে আশ্রিত সেই নারী- পুরুষ-শিশুদের বের করে নিয়ে এসে রাজাকাররা তল্লাশি চালায়। তল্লাশি চালিয়ে অন্যদের সহ তাদের সবাইকে পাথারবাড়িতে এনে দাঁড় করায়। তাদের সোনা-রূপা ও অর্থ-কড়ি সব কেড়ে নেয়া হয়। এরপর তাদের ধরে নিয়ে গ্রামের পেছনে ভালুকখনির শালবনে জবাই করে হত্যা করে। এ গণহত্যায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়। গণহত্যা চালিয়ে পাকবাহিনী চলে গেলে গ্রামের মানুষজন লাশগুলো সেখানেই সমাহিত করে। সেই গণকবর আজো চকদলু গ্রামে বিদ্যমান।
চকদলু গণহত্যায় শহীদ ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— লাল মোহন দাস (পিতা লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস), উপেন দাস (পিতা ধর্ম নারায়ণ দাস), কৈলাস চন্দ্র দাস (পিতা কালি প্রসাদ দাস), অক্ষয় কুমার দাস (পিতা লক্ষণ চন্দ্র দাস), গিরিশ চন্দ্র দাস (পিতা হরেন চন্দ্র দাস), দুর্গা চন্দ্র দাস (পিতা তারিণী চন্দ্র দাস), বিজলী দাসী (পিতা দুর্গা চন্দ্ৰ দাস), সনদ চন্দ্র সরকার, সুচিত্রা রানী এবং খুকি বালা। [মাসুদুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড