You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.27 | গৌরনদী থানার সামনে নদীর পাড় গণহত্যা (গৌরনদী, বরিশাল) - সংগ্রামের নোটবুক

গৌরনদী থানার সামনে নদীর পাড় গণহত্যা (গৌরনদী, বরিশাল)

গৌরনদী থানার সামনে নদীর পাড় গণহত্যা (গৌরনদী, বরিশাল) সংঘটিত হয় ২৭শে এপ্রিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হন।
পাকিস্তানি বাহিনী ২৫শে এপ্রিল স্থলপথে বরিশালে অনুপ্রবেশ করে গৌরনদী কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে গৌরনদী থানা সংলগ্ন গোডাউনে রক্ষিত চাল, ডাল ও গম মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পাঠানোর জন্য লোক জড়ো হয়। এ সময় কিছু মানুষ অভাবের তাড়নায় চাল সংগ্রহের জন্য থানার সামনে আসতে থাকে। এতে অনেক লোকের সমাগম হয়। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে এ খবর পৌঁছে যায়। তারা ২৭শে এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে থানার সামনে জড়ো হওয়া এ সকল মানুষের ওপর হামলা চালায় এবং অর্ধশতাধিক জনকে আটক করে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এএসপি (অবসরপ্রাপ্ত) শান্তনু ঘোষ। হানাদাররা অজিত কর্মকার এবং লেদু নামে ২ জনকে নদীতে সাঁতার দিতে বললে তাঁরা প্রাণ রক্ষার জন্য সাঁতার দিলে পেছন থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করে। অন্যদের লাইনে দাঁড় করিয়ে তারা গুলি করে হত্যা করে। শহীদদের লাশ এলাকাবাসী ২ দিন নদীতে ভেসে থাকতে দেখে। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে কেউ লাশের কাছে যায়নি। এ গণহত্যায় অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হলেও ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- চরগাদাতলী গ্রামের গোপী বণিক (৪৫) (পিতা কাশি বণিক), অজিত কর্মকার (৩০) (পিতা ইন্দু কর্মকার), কালিদাস কুণ্ডু (৭০) (পিতা সাধু কুণ্ডু), দেবেন্দ্র কুমার দেবনাথ (৬০) (পিতা জলধর দেবনাথ), রাধা কুণ্ডু দেবনাথ (৪০) (পিতা দেবেন্দ্র নাথ), রামেশ্বর দেবনাথ (৩৫) (পিতা দেবেন্দ্র নাথ), সুধীর বণিক (৪০) (পিতা অনাথ বণিক, টিকাঘর), যদু শাহ (৭০) (পিতা রাইচরণ শাহ, বিজয়পুর), গৌর কুণ্ডু (৭০) (দক্ষিণ পালরদী), বরিয়া ঠাকুর (২৫) (পিতা কাশিনাথ ঠাকুর, দক্ষিণ পালরদী), জিতেন মান্না ঠাকুর (৩০) (পিতা কুশিনাথ, দক্ষিণ পালরদী), বিন্দুবাসিনী ঠাকুর (৪০) (পিতা সত্যেন ঠাকুর), জৈনুদ্দিন (২০) (পিতা এন্তাজ উদ্দিন, দক্ষিণ চাঁদশী), লেদু দে (২৭) (পিতা ক্ষিতীশ দে, দক্ষিণ চাঁদশী), হানিফ খন্দকার (২৫) (পিতা তোরাব আলী খন্দকার, পিঙ্গলাকাঠী), তৈয়ব আলী তালুকদার (৩০) (পিতা সাফাউদ্দিন তালুকদার, লেবুতলী) ও রনজিত (৩০) (খ্রিস্টানপাড়া, হাজীপাড়া)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড