You dont have javascript enabled! Please enable it! স্থানীয় মুক্তিবাহিনী গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্র গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্র গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম)

গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্র গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) স্থানীয় একটি মুক্তিবাহিনী। ভারতের ১নং সেক্টর হরিণা ক্যাম্পে এটি গঠিত হয়। এর কমান্ডার ছিলেন গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্র (মিত্রবাড়ি, ধলঘাট, পটিয়া; ঢাকার নটরডেম কলেজের অধ্যাপক)। গ্রুপটি গঠিত হওয়ার পূর্বে এর সদস্যরা আরো অনেকের সঙ্গে প্রথমে এক সপ্তাহ হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে ছিলেন। এ-সময় আমির হামজা (সারোয়াতলি, বোয়ালখালি; ইপিআরসদস্য) নামে একজন রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাঁকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হরিণার মাটিতে দাফন করা হয়। এরপর অন্যদের সঙ্গে এ গ্রুপের সদস্যদেরও বগাফা ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক মাস তাঁদের ট্রেনিং চলে। ট্রেনিং প্রদান করেন বাংলাদেশী ও ভারতীয় সামরিক অফিসারবৃন্দ। ট্রেনিং প্রদানে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন ভারতীয় মেজর রাজপুত ও মেজর কে সি গোস্বামী। সকলকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, মার্ক ফোর রাইফেল, স্টেনগান, এসএলআর, এসএমজি, অটো রাইফেল, এলএমজি, গ্রেনেড, বাংকার, এক্সপ্লোসিভ প্রভৃতি পরিচালনার ট্রেনিং দেয়া হয়। ট্রেনিং-এর পর সকলকে হরিণা আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হলে সেখানে গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্রকে কমান্ডার নিযুক্ত করে ১৫১নং গ্রুপ গঠিত হয়। এ গ্রুপের সদস্যরা হলেন- আহমদ নবী (হুলাইন, পটিয়া), সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরু বাঙালি (আশিয়া, পটিয়া), মো. আবুল বশর চৌধুরী (বাড়ৈকাড়া, পটিয়া), মো. আবুল কালাম (পিতা তরম আলী, বাড়ৈকাড়া, পটিয়া), মো. ইবরাহিম চৌধুরী (পিতা নূর আহমদ চৌধুরী, বাড়ৈকাড়া, পটিয়া), কামাল আহমদ (বাড়ৈকাড়া, পটিয়া), মো. নুরুল আলম (গোরনখাইন, পটিয়া), মোহাম্মদ লোকমান (পিতা মোহাম্মদ আমিন, জিরি, পটিয়া), মো. সোলায়মান (হুলাইন, পটিয়া), বিশ্বজিৎ ওরফে বিশ্ব (হাবিলাসদ্বীপ, পটিয়া), দিপুল (কোলাগাঁও, পটিয়া), তাপস বড়ুয়া (পটিয়া), জাফর আহমদ (আশিয়া, পটিয়া), ফরিদুল আলম (বরলিয়া, পটিয়া), মনোজ বড়ুয়া (উনাইনপুরা, পটিয়া), রতন বড়ুয়া (উনাইনপুরা, পটিয়া), জাকির হোসাইন (গৈড়লা, পটিয়া), নুরু (গৈড়লা, পটিয়া), আবদুর রশিদ (গৈড়লা, পটিয়া), ছরওয়ার আলম (মুকুন্নাইট, পটিয়া), রাখাল ভট্টাচার্য (ভাটিখাইন, পটিয়া), রণধীর (হাইদগাঁও, পটিয়া), আশুতোষ (হাইদগাঁও, পটিয়া), বাদল মাস্টার (হাইদগাঁও, পটিয়া), শ্যামাপ্রসাদ বিশ্বাস, নুরুন্নবী ওরফে বদু মিয়া (পিতা আহমদ মিয়া, দক্ষিণ গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), আবদুর রশিদ (পিতা সৈয়দ আহমদ, ঈদপুকুরিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ), কবির আহমদ (পিতা সৈয়দ আহমদ, দক্ষিণ গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), আবুল কাশেম (পিতা মোজাহের মিয়া, গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), শচীন্দ্র বৈরাগী (পিতা মনমোহন বৈরাগী, দোহাজারী) প্রমুখ। ১নং সেক্টর হরিণা ক্যাম্প থেকে এ গ্রুপকে প্রদত্ত অস্ত্রের মধ্যে ছিল- ২টি এলএমজি, ৫টি স্টেনগান, ১০টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, ৮টি এসএলআর, ৬টি মার্ক ফোর রাইফেল, ৫০টি গ্রেনেড, এক্সপ্লোসিভ ও ম্যাগাজিনভর্তি গুলি।
মিত্র গ্রুপটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে পটিয়ার আশিয়া গ্রামের নূর বকসু মাঝির পুত্র আহমদ নবীর ঘর ও ঘরের সম্মুখস্থ ক্লাব ঘরকে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে কার্যক্রম শুরু করে। ২রা ডিসেম্বর এ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ লোকমান (পিতা মোহাম্মদ আমিন) পটিয়ার জিরি কাজির হাট যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে স্টেনগানের সাহায্যে বীরদর্পে লড়াই করে শহীদ হন। তাঁর স্টেনগানের দুই ম্যাগাজিন গুলি শেষ হয়ে গেলে পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে হত্যা করে। এ-যুদ্ধে পটিয়ার ছনহারা নিবাসী বদিউল আলম (পিতা ওমতাজ মিয়া) নামক আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং জিরি এলাকার ধীরেন্দ্র লাল শীল, আবদুস সালাম ও ব্রজেন্দ্র লাল শীল নামক তিনজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। যুদ্ধের পর গ্রুপটি ভেঙে গেলে গ্রুপের সদস্য সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরু বাঙালি ও আহমদ নবীর নেতৃত্বে আলাদা দুটি গ্রুপ গঠিত হয়। সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত গ্রুপটি অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে আহমদ নবী গ্রুপটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশ নেয়। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড