গোয়ালাবাজার গণহত্যা (ওসমানীনগর, সিলেট)
গোয়ালাবাজার গণহত্যা (ওসমানীনগর, সিলেট) সংঘটিত হয় বিভিন্ন সময়ে। এ-সময় গোয়ালাবাজার ইউনিয়নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-রা কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে হত্যা করে। এসব হত্যাকাণ্ড গোয়ালাবাজার গণহত্যা নামে পরিচিত। হানাদাররা এ ইউনিয়নে অগ্নিসংযোগ ও নারীনির্যাতনও সংঘটিত করে।
পাকসেনারা অতর্কিতে হানা দিয়ে গোয়ালাবাজার গ্রামের আব্দুল মান্নান চৌধুরী, গদিয়ার চর গ্রামের আবদুল মনাফ ও মোড়লদাশ গ্রামের তোতা মিয়াকে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে। গোয়ালাবাজারের পূর্বদিকে হাওরে এদিন তারা আরো ২ ব্যক্তিকে হত্যা করে। কাশিপুর গ্রামের নয়ান শুক্লা বৈদ্য একই দিন পাকসেনাদের গুলিতে আহত হন।
১০ই এপ্রিল ইসাগড়াই গ্রামের এক রাজাকার ১০ জন পাকসেনা নিয়ে পশ্চিম সিরাজনগরে যায়। গ্রামে প্রবেশ করে তারা গুলি করে পরেশ চন্দ্র দেব ও নন্দলাল পালকে হত্যা করে। এরপর উমেশ দত্তের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ভীত-সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী যে যেদিকে পারে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। পাকসেনারা ৬ই মে লালকৈলাশে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর তারা গুপ্তপাড়া গ্রামে ঢুকে গোপেশ পালকে হত্যা করে। সেখান থেকে তারা পুরকায়স্থ পাড়ায় যায়। গ্রামবাসী তাদের দেখে প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। পলায়নপর লোকদের লক্ষ করে পাকিস্তানি হানাদাররা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। এতে গৌরীচরণ দেব, গুরুচরণ দেব ও মথুরাচরণ দেব নিহত হন। গুরুতর আহত হন সুরেন্দ্র মালাকার। এরপর তারা একে-একে দাশপাড়া গ্রামের গৌরীচরণ গুপ্ত, জিয়াপক গ্রামের ময়না মিয়া ও মছদ্দর আলী, বরায়া গ্রামের আব্দুল মতিন এবং মোবারক পুরের বিনোদ দাশকে হত্যা করে। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড