গোয়াইনঘাট গণকবর (গোয়াইনঘাট, সিলেট)
গোয়াইনঘাট গণকবর (গোয়াইনঘাট, সিলেট) সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা গোয়াইনঘাট। জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৩২ মাইল। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোয়াইনঘাট ছিল ৫নং সেক্টরের ডাউকি সাব-সেক্টরের অধীন। হানাদার বাহিনী রাধানগর, সারিঘাট, কাকরাই প্রভৃতি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এসব স্থানে গণহত্যা চালায়।
পাকিস্তানি হানাদাররা গোয়াইনঘাটে প্রবেশ করে বিভিন্ন ইউনিয়নে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন চালায়। মে মাসে গোয়াইনঘাটে প্রবেশের কিছুদিন পর পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুছ ছামাদকে খুঁজে না পেয়ে তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। একই দিনে তারা বাউরভাগ গ্রামের আবদুল খালিককে হত্যা করে। জাফলংয়ের ইক্ষু ব্যবসায়ী ছাদই মিয়া এবং তার শ্বশুর হুসেন আলীকেও পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে তারা ৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় লোককে ধরে গোয়াইন নদীর তীরে নিয়ে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। এখানে শিমুলতলা গ্রামের খুরশেদ আলী ও লাবু গ্রামের হাসমত আলীকে মাটিচাপা দেয়া হয়। বর্তমানে সে গণকবরের কোনো অস্তিত্ব নেই। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে গোয়াইন গ্রামে হামলা চালিয়ে মাহমুদ আলী ও তৈয়ব আলীকে ধরে এনে গোয়াইনঘাট গণকবরে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়। পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পিরিজপুর গ্রামের কয়েকজনকে নির্যাতন শেষে হত্যা করে গোয়াইঘাট গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়। আহত হয়ে কোনোরকমে প্রাণে রক্ষা পান ফতু গ্রামের হাজী কেরামত আলী, হাজী ফজল মিয়া এবং শনির গ্রামের আবদুছ ছোবহান। অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবককে ধরে এনে ক্যাম্পে নির্যাতন করে হানাদার ক্যাপ্টেন বসারতের নির্দেশে হত্যা করা হয়। এছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের কয়েকজনকে এখানে হত্যা করে কবর দেয়া হয়। গোয়াইনঘাট গণকবরে ৫০ জনের অধিক লোককে সমাহিত করা হয়। [তপন পালিত]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড