গোপালপুর যুদ্ধ (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী)
গোপালপুর যুদ্ধ (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী) সংঘটিত হয় ১০ই আগস্ট। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়।
গোপালপুর বাজারটি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা সদরের গোপালপুর ইউনিয়নের আওতাভুক্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ স্থান মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অঞ্চলটির দখল নেয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে এবং যুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়ন- নেতা আবু কায়েস মাহমুদ, মোহাম্মদ মহসিন দুলাল, জাকির হোসেন, মাহমুদুল হাসান চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে এ এলাকায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। যুদ্ধ শুরু হলে এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আনিসুল ইসলাম, ছাত্রনেতা নিম চন্দ্র ভৌমিক, ডা. সাহাব উদ্দিন মিন্টু ও স্থানীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে শক্তিশালী মুক্তিযোদ্ধা দল গঠিত হয়। গোপালপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিশালী এ ঘাঁটির অবস্থান স্থানীয় দালালরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মাইজদী ঘাঁটিতে পৌঁছে দেয়। জুন মাসের দিকে হানাদার বাহিনী গোপালপুর আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তাদের পরিকল্পনা সফল করার জন্য তারা গোপালপুর বাজার থেকে ৯ কিমি দক্ষিণে বাংলা বাজার সংলগ্ন সামছুন্নাহার হাইস্কুলে শক্তিশালী রাজাকার- ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পে রাজাকারদের সঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য মিলিশিয়ারাও যোগ দেয়।
১০ই আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শতাধিক সৈন্য গোপালপুর দখলের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ পথে তাদের অভিযান শুরু করে। তিতা হাজরা নামক স্থানে হাবিলদার জাবেদ আলীর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে প্রতিরোধ করেন। এই প্রতিরোধযুদ্ধে িহাবিলদার জাবেদ আলী, নায়েক হাসমত উল্যাহ, হাবিলদার মমতাজ, নায়েক সিরাজ, নজির আহম্মদ মোক্তার, সিপাহি সিরাজ, ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও হায়াত খান, ডা. আনিসুল ইসলাম, নজির আহম্মদ মেম্বার, কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার লুৎফর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহিম, নৌবাহিনীর আবদুল খালেক, এডভোকেট ফজলে কবির, আবদুল নোমান ও নুরুল আমিন চৌধুরী অংশ নেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর কোনো সদস্য হতাহত হননি। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে এবং বাংলা বাজার হয়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার টেকনিক্যাল হাইস্কুলের ঘাঁটিতে ফিরে যায়। এ-যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হানাদার বাহিনী ১৯শে আগস্ট গোপালপুরে গণহত্যা চালায় এবং অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। [মো. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড