গোপালনগর কালীবাড়ি গণহত্যা (ফরিদপুর, পাবনা)
গোপালনগর কালীবাড়ি গণহত্যা (ফরিদপুর, পাবনা) সংঘটিত হয় ২১শে আগস্ট। এতে ২৯ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়।
পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার একটি গ্রাম গোপালনগর। হিন্দুপ্রধান এ গ্রামটিতে হিন্দু-মুসলমান উভয়ে মিলেমিশে বসবাস করত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সমগ্র এলাকায় তখন যুদ্ধের আতঙ্ক বিরাজ করে। স্থানীয় জনগণ রাত জেগে পাহারা দিত যাতে হানাদার বাহিনী আক্রমণ করলে গ্রামের সকলকে জানানো সম্ভব হয়। তা সত্ত্বেও ২১শে আগস্ট হানাদার বাহিনী এ গ্রামে নারকীয় গণহত্যা সংঘটিত করে। ২০শে আগস্ট দিবাগত রাতে পাহারা শেষ করে ভোররাতে যখন সবাই বাড়ি গিয়ে ঘুমাতে যায়, তখনই স্থানীয় রাজাকার দের সহায়তায় পাবনা থেকে আতাইকুলা হয়ে একদল পাকসেনা গোপালনগর গ্রামে অতর্কিতে আক্রমণ করে। তারা সমগ্র গ্রামটি ঘিরে ফেলে এবং দালালদের চিনিয়ে দেয়া বাড়ি থেকে মানুষজন ধরে এনে কালীবাড়ির সামনে জড়ো করতে থাকে। জড়ো করা মানুষদের মধ্য থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক এ রকম ২৯ জনকে বাছাই করে কালীবাড়ির আটচালায় লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেমকে কালীমন্দিরের ত্রিশুল দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় কালীবাড়ির মাটি। এরপর তারা গোপালনগর গ্রামটি লুট করে এবং পুড়িয়ে দেয়। ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে-দিতে নরপশুরা চলে যায়। হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা চলে যাওয়ার পর ভীত-সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী লাশ সরাতে গিয়ে তাদের মধ্য থেকে ২ জন (অনিল কর্মকার ও পঞ্চানন ঘোষ)-কে জীবিত উদ্ধার করে। মৃতদের অধিকাংশকে বড়াল নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয় এবং কয়েকজনকে গণকবরে সমাহিত করা হয়।
গোপালনগর কালীবাড়ি গণহত্যার শিকার ২৯ জনের মধ্যে ২৬ জন শহীদের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন- গোপালনগর গ্রামের সুধীর পাল (উত্তর টিয়ার পাড়া), রঞ্জিত পাল (উত্তর টিয়ার পাড়া), রামপদ ঘোষ, মন্মথ হালদার, দুখিরাম ঘোষ, বিষ্ণুপদ ঘোষ, হরিপদ ঘোষ, অমেষ হালদার, সম্ভুনাথ হালদার, ভৈরব কর্মকার, আবুল কাশেম মোল্লা, এন্তাজ আলী সরকার, সুধীর মালাকার, অমূল্য সরকার, রবি নন্দী, ধীরেন অধিকারী, বুদে হালদার, কালাচাঁদ পাল, গোপাল পাল, রবি পাল, সুধীর কর্মকার, ফটিক হালদার, হরেন হালদার, ধীরেন্দ্রনাথ সরকার, ধীরেন অধিকারী ও মদন হালদার। গোপালনগর বাজারের পার্শ্বে শহীদ আবুল কাশেম স্মৃতি সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। [মো. আশরাফ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড