You dont have javascript enabled! Please enable it! জামায়াতের নিবন্ধন বেআইনি ঘােষণা - সংগ্রামের নোটবুক

জামায়াতের নিবন্ধন বেআইনি ঘােষণা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া নির্বাচন কমিশনের আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত কাজ বলে ঘােষণা করে হাইকোর্ট তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, এ নিবন্ধনের আইনগত কার্যকারিতা নেই। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে অস্থায়ী নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কারণ, দলটি তখনাে নিবন্ধনের জন্য পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র জমা দেয়নি। ওই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে বিচারপতি এম মােয়াজ্জেম হােসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ নিবন্ধন বেআইনি বলে রায় দেন। ২ নভেম্বর ২০১৩, ১৫৮ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশিত হয়।জামায়াতের নিবন্ধন বেআইনি ঘােষণা করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের দেওয়া রায়ের সঙ্গে একমত পােষণ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। সঙ্গে তিনি তাঁর অভিমতও যুক্ত করেন। রায়ে বলা হয়, জামায়াত ও নির্বাচন কমিশন যুক্তি দেখিয়েছে, ওই নিবন্ধন ছিল সাময়িক। কিন্তু সাময়িক নিবন্ধন দেওয়ার কোনাে বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নেই । নিবন্ধন সনদেও সাময়িক নিবন্ধন বলে কোনাে বিষয় নেই। রায়ে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে আইনগত শর্ত পূরণ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে এ মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ মাস করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণ করেনি জামায়াত। সংশ্লিষ্ট বিধিতে সুস্পষ্টভাবে এটা বলেছে, শর্ত পূরণ না করা কোনাে গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে কোনাে দলকে নিবন্ধন দেওয়ার এখতিয়ার ইসির নেই।

আদালতে দাখিল করা ইসির হলফনামা এবং অন্যান্য প্রতিবাদী (জামায়াত) পক্ষের হলফনামা পর্যালােচনা করে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম রায়ে বলেন, আরপিওর ৯০(ঘ) অনুচ্ছেদ বা আইনটির অন্য কোথাও নির্বাচন কমিশনকে কোনাে রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র সংশােধন, পরিমার্জন বা সংযােজনের জন্য তাগিদপত্র প্রদানের মাধ্যমে অভিভাবক’ বা পরামর্শদাতার ভূমিকা পালনের কোনাে ক্ষমতা ও এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম থেকে প্রতীয়মান হয়, প্রতিষ্ঠানটি জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রটি বছরের পর বছর কথিত সংশােধনের সুযােগ প্রদান অব্যাহত রেখে আইনবহির্ভূত কাজ অব্যাহত রেখেছে; যা বেআইনি। এ ধরনের কাজকে আইনের ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘সংবিধি বা আইনের সাথে প্রতারণা’। রায়ে বিচারপতি এম মােয়াজ্জাম হােসেন বলেন, আবেদনে জামায়াতের ধর্মীয় চরমপন্থা, জঙ্গিবাদ এবং জিহাদের দিকে ইঙ্গিত করেন আবেদনকারীরা। নিঃসন্দেহে এসব বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। জামায়াতের যেসব রাষ্ট্রবিরােধী। তৎপরতার কথা বলা হয়েছে তার সবই পুরােনাে। এত বছর পর এ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তােলার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিনি রিট নিষ্পত্তি করে বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে করা রিট গ্রহণযােগ্য নয়।

ঘটনা প্রবাহ
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদনটি করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। রিটে বলা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) এবং ৯০সি-এর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থী। সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলােতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধনীকরণের যােগ্য না। হওয়ার বিষয়ে বলা আছে। রিট আবেদন থেকে জানা যায়, ধারাগুলােতে চারটি শর্তের কথা আছে, যেসব কারণে রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। এক, দলের গঠনতন্ত্র যদি সংবিধান পরিপন্থী হয়; দুই, গঠনতন্ত্রে কোনাে বিশেষ ধর্ম, বর্ণ, গােষ্ঠী, ভাষা বা লিঙ্গভেদে কোনাে বৈষম্য প্রতীয়মান হয়; তিন, নাম, পতাকা, চিহ্ন বা অন্য কোনাে কর্মকাণ্ড দ্বারা সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হওয়া কিংবা দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে; চার, দলের গঠনতন্ত্রে দেশের ভৌগােলিক সীমার বাইরে কোনাে দপ্তর, শাখা বা কমিটি গঠন এবং পরিচালনার বিধান থাকে।

সূত্র : ফিরে-দেখা-৭১-যুদ্ধাপরাধীদের-বিচার-সুজন-হালদার