You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক গিয়াস উদ্দিন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক গিয়াস উদ্দিন

গিয়াস উদ্দিন, বীর প্রতীক (১৯৩৭-২০০৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিশিষ্ট সংগঠক। তিনি ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা
থানার তল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সামসুদ্দীন আহমেদ এবং মাতার নাম আম্বিয়া খাতুন। গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর বিএ পাস কোর্সে ভর্তি হন। তোলারাম কলেজের ছাত্র থাকাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। নারায়ণগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হিসেবে গিয়াস উদ্দিন শিল্পাঞ্চল, পাওয়ার স্টেশন, আদমজি জুট মিলস, নৌবন্দর প্রভৃতি স্থানে অবাঙালি কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা বাঙালি শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী ধরনের বৈষম্যমূলক ও হীন আচরণ করত তা প্রত্যক্ষ করেন। ফলে পাকিস্তানিদের প্রতি তিনি বিক্ষুব্ধ হন। ৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিলে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। গিয়াস উদ্দিন এসব আন্দোলনে অংশ নেন।
২৫শে মার্চের পর গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ নেন। এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দখল প্রতিষ্ঠিত করলে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তিনি ভারতে যান। আগরতলাস্থ ২ নম্বর সেক্টরে মেজর খালেদ মোশাররফ ও ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দারের তত্ত্বাবধানে মেলাঘর থেকে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ঢাকা ও এর কাছাকাছি এলাকায় পাকিস্তানিদের ওপর গেরিলা আক্রমণের জন্য মেজর খালেদ ও ক্যাপ্টেন হায়দার যে ক্র্যাক প্লাটুন- তৈরি করেন, গিয়াস উদ্দিন তার অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁকে একটি ইউনিটের প্রধান করে নারয়ণগঞ্জ এলাকায় হানাদার পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি তাঁর দল নিয়ে দেশে ফিরে বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। সেগুলোর মধ্যে বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ সেতু অপারেশন, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশন, ফতুল্লায় পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ, আড়াইহাজার থানা আক্রমণ এবং কলাগাছিয়ায় (আড়াইহাজার উপজেলাধীন) পাকসেনাদের গানবোট আক্রমণ উল্লেখযোগ্য। লাঙ্গলবন্দ সেতু অপারেশনে গিয়াস উদ্দিনের দলের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৪ জন পাকসেনা ও ২ জন ইপিআর সদস্য নিহত হয়। ২৬শে অক্টোবর কলাগাছিয়ায় গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের গানবোটে আক্রমণ করলে গানবোটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার গিয়াস উদ্দিনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। তিনি গত শতাব্দীর আশির দশকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ রেড ক্রিসেন্টের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলিতে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যা নিকেতন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কিল্লারপুল থেকে তলা পর্যন্ত রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে “গিয়াস উদ্দিন বীর প্রতীক সড়ক’। তিনি ২০০৪ সালের ৫ই ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম খুরশিদা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড