গিরি চৌধুরী বাজার অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম)
গিরি চৌধুরী বাজার অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ১১ই ডিসেম্বর শাহজাহান ইসলামাবাদী (পিতা মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী)-র নেতৃত্বে। সেদিন ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দা, খন্তা, কিরিচ ও রড দ্বারা বাজারের ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলেন। তারপর বাজারের পশ্চিম পাশে অশ্বত্থ গাছের সঙ্গে দুটি এবং ভাঙ্গা ব্রিজের মাঝখান বরাবর পূর্বপাশে একটি বাংকার খনন করা হয়। বাজারে আরাকান রোডের মাঝখানে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়। বাঁধের উচ্চতা ছিল আড়াই হাতের মতো। স্থানীয় লোকজন বাংকার খনন ও বাঁধ দেয়ার কাজে সহায়তা করে। এ-ক্ষেত্রে কচুয়াই ইউনিয়নের পাড়িগ্রামস্থ মল্লাপাড়া ও চৌধুরী পাড়ার লোকজনের সহায়তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অশ্বত্থ গাছের বাংকার দুটিতে দুজন করে মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্রিজের মাঝখান বরাবর পূর্বপাশের বাংকারে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন। বাঁধ ছিল বাজারের পশ্চিম পাশে অশ্বত্থ গাছের সঙ্গের বাংকার দুটি বরাবর। বাঁধের পেছনে এম্বুশ রচনা করেন ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা। ব্রিজের পূর্বপাশের বাংকারে সালেহ আহমদ (পিতা এনায়েত আলী) ও আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইছহাক) নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ তিনজন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন। বাঁধের পেছনে এম্বুশে থাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেন স্বপন (পিতা মতিচন, চন্দনপাড়া, হাইদগাঁও)।
ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে দোহাজারীর দিক থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের ৩টি গাড়ি ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে এলে ব্রিজ ভাঙা দেখে থেমে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে বাংকারসমূহ ও বাঁধের এম্বুশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার শুরু করেন। তখন পাকিস্তানি সৈন্যরাও তাদের তিনটি গাড়ি একটু পেছনে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ফায়ার করতে থাকে। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সৈন্যদের আরো একটি গাড়ি দোহাজারীর দিক থেকে আসে। তারাও গাড়ি থেকে নেমে ফায়ার শুরু করে।
এরপর পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকক্ষণ গোলাগুলি চলে। এক পর্যায়ে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে গিরি চৌধুরী বাজারের পশ্চিম দিকে পিছু হটতে থাকে। ব্রিজের মাঝখান বরাবর পূর্বপাশের বাংকারে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা দক্ষিণ দিকে কচুয়াই ইউনিয়নের রজনি ডাক্তারের বাড়ির দিকে চলে যান। পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে অনেক রাজাকার ও ছিল। তারা গুলি করতে-করতে মুক্তিযোদ্ধাদের ধাওয়া করে। তবে তারা কাউকে ধরতে বা আহত করতে পারেনি। ফলে তারা হিংস্র হয়ে গিরি চৌধুরী বাজারের পশ্চিম দিকের বাড়িগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা সংঘটিত করে।
কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- এ টি এম জসিম উদ্দিন (এয়াকুবদণ্ডি, পটিয়া), সালেহ আহমদ (পিতা এনায়েত আলী, খরনা, পটিয়া), স্বপন (পিতা মতিচন, হাইদগাঁও), এম জাহাঙ্গীর (পিতা তমিজ উদ্দিন, ডেকোটা, আনোয়ারা), আবুল বশর (পিতা মাওলানা মো. ইছহাক, উত্তর হাশিমপুর, চন্দনাইশ), মোহাম্মদ আহমদুর রহমান (পিতা আবদুর রহিম, বরকল, চন্দনাইশ), আবুল বশর (পিতা আবদুছ ছমদ), আবুল কালাম (পিতা ওবায়দুর রহমান), মো. সোলায়মান (পিতা মোখলেছুর রহমান), আবু তৈয়ব (পিতা আবদুল গাফফার), এ এম মনচুর (পিতা আবদুল হাই), ছাদেক আবদুল মহী (পিতা আবদুল মোনায়েম), আবদুছ ছবুর (পিতা রমজু মিয়া), মোহাম্মদ সোলায়মান খান (পিতা আনু মিয়া), ইসলাম খাঁ (পিতা নাগু মিয়া), মোহাম্মদ শফি (পিতা আবদুল গণি), বদিয়ুল আলম (পিতা আবদুল খালেক), বদরুল আলম (পিতা আবদুর রহমান), আইয়ুব বাঙালি (পিতা মোহাম্মদ ইছহাক), মুজিবুর রহমান (পিতা মাহমুদুর রহমান), নাজিম উদ্দিন (পিতা আবদুছ ছমদ), মোহাম্মদ আমানত খাঁ (পিতা আহামদ মিয়া), আযম খাঁ (পিতা মখলচুর রহমান), আবুল মনজুর (পিতা আবদুল জব্বার), শফিফুল আলম (পিতা সোলতান আহমদ), আবুল মনজুর (পিতা কবির আহমদ), আবু সোলায়মান (পিতা ওবায়দুর রহমান), মোহাম্মদ আলী (পিতা আনু মিয়া), বরমা এলাকার মোজাহেরুল ইসলাম (পিতা মোহাম্মদ বকস), মোহাম্মদ ফজলুল কবির (পিতা আবদুল মোনাফ), মাহমুদুর রহমান (পিতা মোহাম্মদ লাল মিয়া), নুরুল হুদা (পিতা মোহাম্মদ কবির আহমদ), আবুল মনজুর (পিতা ইমাম আলী), এম আবুল কাসেম (পিতা সোলতান আহমদ), এ টি এম শামসুল হুদা (পিতা আবদুল মোনাফ), ডা. গোলাম মওলা, বদিয়ুল আলম (পিতা মোহাম্মদ ছাবের), অরুণ বিকাশ দাস (পিতা মোহনবাঁশি দাস), মাহবুবুল আলম, এ কে এম ইয়াহিয়া (পিতা আবদুল মোনাফ), সিরাজুল হক (পিতা হাবিবুর রহমান), মোহাম্মদ আবুবকর (পিতা আবদুল গাফফার), এস এম মাসুদ (পিতা আবদুল হাই), নুর মোহাম্মদ (পিতা মো. ছিদ্দিক), নুরুল ইসলাম (পিতা এজাহার মিয়া), মো. মঞ্জুরুল হক খান (পিতা মীর আহমদ খান), এস এম আলমগীর আলম (পিতা বদিউল আলম) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড