গুঠিয়া গণহত্যা (উজিরপুর, বরিশাল)
গুঠিয়া গণহত্যা (উজিরপুর, বরিশাল) সংঘটিত হয় ১৭ই মে। এতে অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষ শহীদ হন। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিমি দক্ষিণে এবং বরিশাল সদর থেকে ২০ কিমি পশ্চিমে গুঠিয়ার অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই স্থানীয় ভারুকাঠী গ্রামের জনৈক বিহারির অত্যাচারে গুঠিয়াবাসী খুবই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। কমান্ডার হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তার বিরুদ্ধে অপারেশন চালান। তাঁরা তাকে গুঠিয়া বাজারের পাশে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়। গুঠিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান রয়েছে রাজাকারদের দেয়া এ সংবাদের ভিত্তিতে ১৭ই মে বরিশাল থেকে একদল পাকিস্তানি সৈন্য গানবোটে করে গুঠিয়া খালে এসে নামে এবং সেখান থেকে গুঠিয়া বাজারে প্রবেশ করে ডাইমুল্লা মসজিদের সামনে নিত্যানন্দী পাড়ায় আবদুস সত্তার হাওলাদার (বড় মিয়া)-এর ঘরের পাশে গণহত্যা চালায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ-সময় হাসেম মাঝিসহ মন্নান মাঝির বাড়ির ৮ জনকে হত্যা করে। পরে আরো অনেককে হত্যা করে। গুঠিয়া গণহত্যায় প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হন, যাদের মধ্যে ১৯ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- নওয়াব আলী (৩০) (শ্রমিক), কালু হাওলাদার (৬০) (কৃষক), সেলিম হাওলাদার (২৮) (ব্যবসায়ী), মরিয়ম বিবি (৫৫) (গৃহিণী), জরিনা বিবি (৩৫) (গৃহিণী), চন্দ্রবান বেগম (৩০) (গৃহিণী), বিবিজান (৫৫) (স্বামী কালু হাওলাদার, গৃহিণী), জমিলা খাতুন (৪৫) (গৃহিণী), আবদুল মজিদ (৪৮) (খুলনা; চাকরিজীবী), ছকিনা বেগম (৩২) (গৃহিণী), সালেক মুন্সি (৫০) (কৃষক), আশ্রাব আলী মুন্সি (৬০) (কৃষক), মোকসেদ মাঝি (৬৫) (পিতা মৌলভী নজর আলী মাঝি, ব্যবসায়ী), আজিজুল হাকিম (২০) (পিতা ছোমেদ মাঝি, ছাত্র), সোবাহান হাওলাদার (৫০) (শ্রমিক), সোবাহান বেপারী (৫৫) (শ্রমিক), মাজহার লস্কর (৪০) (শ্রমিক), আদম আলী কারিগর (শ্রমিক) ও মনসুর আলী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড