গর্জনা যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল)
গর্জনা যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১৪ই আগস্ট টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গর্জনা গ্রামে। ১১ই আগস্ট ভূঞাপুরের সিরাজকান্দিতে সংঘটিত – জাহাজমারা যুদ্ধ-এ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র ও জাহাজ খোয়ানোর পর ১২ই আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী চতুর্দিক থেকে ভূঞাপুরের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধার কারণে তারা ভূঞাপুরে প্রবেশ করতে পারেনি। অতঃপর ১৩ই আগস্ট তারা ভূঞাপুরের সিরাজকান্দি, মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া প্রভৃতি স্থানে বিমান হামলা চালায়। কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান – আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম- তখন ভূঞাপুর ডাকবাংলোতে অবস্থান করছিলেন। ঐদিন সন্ধ্যার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন এবং পরের দিন ১৪ই আগস্ট ভোরে কয়েক নৌকা অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ডাকবাংলো ছেড়ে গর্জনা গ্রামের আবু সাঈদ মেম্বারের বাড়িতে অবস্থান নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবদুল আলীম তালুকদার, আবদুল হামিদ ভোলা, আসলত খাঁ, জামান, আবদুল হাই ও মিন্টুসহ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা। কিছুক্ষণ পরে কমান্ডার খোরশেদ আলম তালুকদার ও কমান্ডার হাবিবুল হক খান বেনু তাঁদের কোম্পানির কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ সেখানে গিয়ে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগ দেন।
বেলা ১২টার দিকে পাকসেনাদের বহনকারী ১০-১২টি নৌকা ঘাটাইল থেকে গর্জনার দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখে কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই নৌকাগুলো নিরাপদে রেখে যার-যার পজিশনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের পূর্বপাশে নৌকা থেকে ডাঙ্গায় নামার চেষ্টা করতেই খোরশেদ আলম তালুকদার, আসলত খাঁ, আবদুল হাই ও জামানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ার গর্জে ওঠে। পাকসেনারাও পাল্টা জবাব দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকসেনারা পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবর্ষণ চলতেই থাকে। তাদের গোলাগুলির আঘাতে পর্যুদস্ত হয়ে পাকসেনারা এক পর্যায়ে পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম তালুকদার আহত হন। পাকসেনাদের একটি দুই ইঞ্চি মর্টারসহ ষোলটি অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এছাড়া গুলির আঘাতে ডুবে যাওয়া পাকসেনাদের নৌকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আরো ১০টি অস্ত্র উদ্ধার করেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড