You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.06 | গাইডহারা যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

গাইডহারা যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

গাইডহারা যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই ডিসেম্বর। এতে ২০-২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ রোডের বর্তমান মুসলিমপুর মোড় থেকে শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার রাস্তায় মোড় সংলগ্ন স্থানের নাম ১৯৭১ সালে ছিল গাইডহারা। এখান থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে ধোবড়াবাজারের দক্ষিণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘাঁটিতে বহুবার আক্রমণ করে সফল হতে পারেননি, অথচ এ ঘাঁটিটি ধ্বংস করা তাঁদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। এ কারণে ডিসেম্বর মাসের শুরুতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত হয় সামনে থাকবে মুক্তিবাহিনী আর পেছনে থাকবে মিত্রবাহিনী। সবার পেছনে থাকবে উভয় বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স। স্ট্রাইকিং ফোর্স দখলদার বাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাবে আর তাদের সাপোর্ট করবে যৌথবাহিনী।
ভারত ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর একদিন পূর্বে ৫ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর কিছু সৈনিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে সোনামসজিদের ১ কিলোমিটার দক্ষিণে কয়লাবাড়িতে অবস্থান নেয়। এদিন সন্ধ্যায় সুবেদার আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা গাইডহারায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ৬ই ডিসেম্বর সকালবেলা পাকসেনাদের দালাল ধোবড়ার পালানু মেম্বার নলদিঘির পাশের জমি দেখতে বের হয়। জমিতে যাওয়ার পথে গাইডহারায় পৌঁছলে সেখানে চাপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কের পশ্চিম পাশে কিছু লোকের উপস্থিতি লক্ষ করে সে নিশ্চিত হয় যে, এরা মুক্তিযোদ্ধা। সে বাড়ি ফিরে হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন শরিফ আহমদকে বিষয়টি জানায়।
এদিকে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সুবেদার আনিসুর রহমানের অবস্থানের ডানে ও বামে প্লাটুন কমান্ডার নজরুল ইসলাম, আফসার হেসেন, হাবিবুর রহমান ও আরজেদ আলির নেতৃত্বে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা এসে যোগ দেন। এ সংবাদ পালানু মেম্বার জানত না। তাই তার পক্ষে ক্যাপ্টেন শরিফকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা জানানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থানে আক্রমণ পরিচালনা করে তাদের জীবিত ধরার ছক আঁটে দখলদার পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন। হানাদার সৈন্যরা চুপিসারে সুবেদার আনিসুর রহমানের যোদ্ধাদের একদম কাছে চলে আসে। ঠিক তখনই মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ করেন। সম্মুখ ভাগে থাকা একজন হানাদার সৈন্য গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণ। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পূর্বদিকে অবস্থান নেয়া আরজেদ আলির এবং পশ্চিমে অবস্থান নেয়া নজরুল ইলামের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত সামনে অগ্রসর হন। উভয় দলের মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনারা বুঝতে পারে যে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য তারা পেছনে সরে যায়। ইতোমধ্যে তাদের ২০-২৫ জন সৈন্য নিহত হয়। শিবগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পালানু মেম্বার নিহত হয়। [তামিজ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড