You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক খোরশেদ আলম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক খোরশেদ আলম

খোরশেদ আলম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৩৭ ) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৭ সালে বর্তমান নড়াইল জেলার চান্দের চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইয়াকুব শরীফ এবং মাতার নাম ধলা ছুটু বেগম। খোরশেদ আলম স্থানীয় স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ৭ বছর পুলিশে চাকরির পর ১৯৫৯ সালে তাঁকে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ইপিআর)-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৭০-৭১ সালে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি খোরশেদ আলমকে প্রভাবিত করে। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণে এবং ৭০-এর নির্বাচনে বিজয় লাভ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় অন্য ক্ষুব্ধ হন। ৭১-এর মার্চ মাসে বাঙালিদের মতো তিনিও খোরশেদ আলম ইপিআর-এর সিলেট হেডকোয়ার্টার্সের ১২ নম্বর উইং-এর আওতাধীন তামাবিল সীমান্তে কর্মরত ছিলেন। এখানে তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি বিদ্রোহী সদস্যদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। এ দল এপ্রিল মাসের শুরুতে জৈন্তাপুরে অবস্থিত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে তাদের ঘাঁটির পতন ঘটে এবং পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন রশিদ নিহত হয়। এপ্রিলের শেষের দিকে সিলেটের শিবপুর এলাকায় খোরশেদ আলমের নেতৃত্বাধীন দল পাকসেনাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাঁরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়লে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। খোরশেদ আলম ডাউকি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছেন। তিনি ৫ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। এ সেক্টরের ডাউকি সাব-সেক্টরের আওতাধীন জাফলং- তামাবিল-জৈন্তা-গোয়াইনঘাট এলাকায় তিনি একাধিক যুদ্ধে অংশ নেন। ৭ই ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটস্থ পাকহানাদারদের ক্যাম্প আক্রমণ ও সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কের গোয়াইনঘাট ব্রিজ ধ্বংস করার অপারেশনে তাঁকে দলনেতা নিয়োগ করা হয়। তাঁর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে আক্রমণ করলে রাজাকার- ও পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করে। ফলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ আক্রমণের মুখে হানাদাররা পালিয়ে যায়। মাইনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গোয়াইনঘাট ব্রিজ ধ্বংস করা হয়। খোরশেদ আলম অপরিসীম দক্ষতা ও চরম সাহসিকতার সঙ্গে এ অপারেশন সফল করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার খোরশেদ আলমকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম কোহিনূর আলম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড