খাজুরিয়া যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)
খাজুরিয়া যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ২০শে জুলাই। এতে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়।
সুবেদার জহিরুল হক পাঠানের নির্দেশে ঘটনার দিন খুব ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্লাটুন কামতা ও গল্লাক এবং বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়ার গ্রুপ ওয়াপদা বেড়িবাঁধে অবস্থান নেয়। উদ্দেশ্য, রামগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জ থেকে আগত পাকবাহিনীকে প্রতিহত করা। এ- সময় পাকবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার মিয়া তাসকিন উদ্দিন ফেনীতে অবস্থান করছিল। সে সুযোগ পেলেই ফরিদগঞ্জে আক্রমণ চালাত। তবে তাতে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। প্রতিবারই তাকে অসংখ্য লাশ ও আহত সৈনিকদের নিয়ে পশ্চাদপসরণ করতে হয়। এসব কারণে জহিরুল হক পাঠান মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করে একটি গ্রুপকে রাখেন সেনাপুর অভিমুখী রাস্তায় এবং অপর গ্রুপটিকে রিজার্ভে রেখে নিজে তার দায়িত্বে থাকেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আষ্ট্রা বাজার থেকে একদল পাকসেনা এসে খাজুরিয়া সিংহবাড়ির গেটের সামনে এক প্রকাণ্ড গাছের নিচে বসে সকালের নাশতা করছিল। এ খবর স্থানীয় জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এসে পাকসেনাদের প্রায় ঘিরে ফেলেন। ঠিক এ মুহূর্তে একজন দালাল পাকবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের কথা জানিয়ে দেয়। সঙ্গে-সঙ্গে তারা ফরিদগঞ্জের দিকে দৌড়াতে থাকে। এ-সময় ল্যান্স নায়েক ছিদ্দিক (মহামায়া) ও অন্যরা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। এতে ৪-৫ জন পাকসেনা মারাত্মকভাবে জখম হয়। একদিকে পাকবাহিনী ফায়ার করতে-করতে দৌড়ায়, অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার করতে-করতে তাদের ধাওয়া করেন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীকে আক্রমণ করেছেন এ খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে নোয়াখালী, রূপসা, কড়ইতলী, পাইকপাড়া, চান্দ্রা, গাজীপুর, গল্লাক, বাসারা, ষোল্লা ও রামগঞ্জ থেকে দা, কুড়াল, টেটা (বর্শা), খাবর, বল্লম, লাঠি প্রভৃতি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শতশত সাধারণ লোক খাজুরিয়া বাজারে এসে উপস্থিত হয়। তাদের গগনবিদারী স্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। [দেলোয়ার হোসেন খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড