You dont have javascript enabled! Please enable it! খরনা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

খরনা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম)

খরনা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। সুবেদার মেজর টি এম আলী বাহিনীর হাবিলদার সুজার নেতৃত্বে এ বাহিনীর সদস্য এবং সুলতান আহমদ কুসুমপুরী বাহিনীর কতিপয় মুক্তিযোদ্ধার যৌথ অংশগ্রহণে এ অপারেশন পরিচালিত হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ আলম শহীদ হন। অপরপক্ষে ৯ জন রাজাকার- নিহত এবং তাদের ১৮টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও ১ পেটি গুলি (প্রায় ৫০০ রাউন্ড) মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
খরনা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প গঠিত হওয়ার পর থেকে খরনা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচার, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি পায়। ফলে এ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ- নেতা গোলাম কাদের, শাহ্ আলম ও মাস্টার ইসহাক এ ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। গোলাম কাদের হাইদগাঁও সাতগাছিয়া দরবার শরীফের শাহজাদা ও টি এম আলী বাহিনীর যোদ্ধা মোস্তাকবিল্লা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামশুদ্দিন আহমদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। সামশুদ্দিন আহমদ আগে থেকে খানমোহনা রেল স্টেশন রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনার কথা চিন্তা করছিলেন। তিনি খরনা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প ও খানমোহনা রেল স্টেশন রাজাকার ক্যাম্পে যুগপৎ অপারেশন পরিচালনা করা উত্তম হবে বলে মোস্তাকবিল্লাকে জানান। বিষয়টি রাঙ্গুনিয়ার পার্বত্যাঞ্চলে অবস্থানরত টি এম আলীকে অবহিত করলে তিনি হাবিলদার সুজা ও হাবিলদার মফিজকে দরবার শরীফে মুক্তিযোদ্ধাদের শেল্টারে পাঠান। দুই হাবিলদার খরনা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প রেকি করে পুনরায় দরবারে এসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামশুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে এই ক্যাম্প ও খানমোহনা রেলস্টেশন রাজাকার ক্যাম্পে একই সঙ্গে অপারেশন পরিচালনার পরিকল্পনা করেন।
সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে টি এম আলী বাহিনীর হাবিলদার সুজার নেতৃত্বে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল হাজী মাঠের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়ে রাত ১২টায় খরনা ব্রিজে আসে। কিছুক্ষণ পর তারা রাজাকার ক্যাম্পে গ্রেনেড চার্জ করেন। রাজাকাররা তখন ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। গ্রেনেডের শব্দে ঘুম থেকে তড়িৎ জেগে উঠে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে পাল্টা আক্রমণ করে। এরপর উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাত ১২টার পর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাজাকারদের সঙ্গে লড়াই করার এক পর্যায়ে রাজাকারদের অস্ত্রের গুলি ফুরিয়ে যায়। এমনি অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশ করে ৪ জন রাজাকারের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প থেকে মোট ১১ জন রাজাকারকে বন্দি এবং ১৮টি থ্রি- নট-থ্রি রাইফেল ও ১ পেটি গুলি (প্রায় ৫০০ রাউন্ড) উদ্ধার করেন। সেখান থেকে নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসার পথে বন্দিকৃত ১১ জন রাজাকারের মধ্যে কমান্ডার আসলাম ও ডেপুটি কমান্ডার ইসহাকসহ ৪ জন রাজাকার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকিদের ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং ২ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ আলম গুলিবিদ্ধ হন। হাজী মাঠের ক্যাম্পে তাঁকে নিয়ে আসা হলেও চিকিৎসার অভাবে পরদিন তিনি মারা যান।
এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন সুবেদার মেজর টি এম আলী বাহিনীর হাবিলদার সুজা, হাবিলদার মফিজ, ক্যাপ্টেন ছমদ, সিপাহি মুজিবুর, আবদুল খালেক, হাবিলদার মালেক, আকতার মিয়া (পিতা নূর আহমদ, লালারখীল, খরনা), হোসেন আহমদ (পিতা নূরুল আমিন, লালারখীল, খরনা), ইসহাক মিয়া (পিতা সাইর আহমদ, লালারখীল, খরনা), নূরুল আলম (পিতা আবদুল মজিদ, লালারখীল, খরনা), মোস্তাকবিল্লা, কানুনবিল্লা, আবু তাহের (পিতা ফজল আহমদ), ফারুক (ফকিরপাড়া, খরনা), আমির আলী, শাহ্ আলম (শহীদ), নুর আহমদ এবং সুলতান আহমদ কুসুমপুরী বাহিনীর আতিউর রহমান (কুমিল্লা), হাবিলদার আছহাব মিয়া (উত্তর গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), আবুবক্কর (বৈলতলী), ছাবের আহমদ (পিতা গুরা মিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড