You dont have javascript enabled! Please enable it! খর্নিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) - সংগ্রামের নোটবুক

খর্নিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

খর্নিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় জুন মাসের প্রথম দিকে। এতে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন খর্নিয়া ডুমুরিয়া সদর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ একটি বাজার রয়েছে। বাজারের পশ্চিম দিকে ভদ্রা নদী। ১৯৭১ সালে এ নদীতে কোনো ব্রিজ ছিল না, পারাপারের মাধ্যম ছিল খেয়া নৌকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার- ও পাকসেনারা এ নদীতে নিয়মিত গণহত্যা চালায়।
ডুমুরিয়া থানার রাজাকারদের মধ্যে খর্নিয়া ইউনিয়নের রাজাকার বাহিনী অনেক শক্তিশালী ছিল। হত্যা ও নারীনির্যাতনের মাধ্যমে এ বাহিনী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। রাজাকাররা বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যুবকদের ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করত। এদের নির্যাতন কৌশল ছিল খুবই নৃশংস। জুন মাসের দিকে রাজাকাররা একজনকে হত্যা করে খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি গাছে পেরেক মেরে ঝুলিয়ে রাখে। এরা যাদের হত্যা করতে চাইত, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের ধরে এনে প্রথমে নির্যাতন করত, তারপর সাধারণত হাত-পা বেঁধে জীবন্ত নদীতে ফেলে দিত। এভাবে ললিত মল্লিক (ভদ্রদিয়া) এবং আলি বখশ (শোভনা)-কে হাত- পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। জুন থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত রাজাকাররা এখানে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়।
রাজাকারদের এরূপ হত্যাকাণ্ড ছাড়াও পাকসেনারা খর্নিয়াতে একটি গণহত্যা সংঘটিত করে। এপ্রিল মাস থেকে ভদ্রা নদী দিয়ে মাঝে-মাঝে পাকিস্তানি সৈন্যদের গানবোট টহল দিত। জুন মাসের প্রথম দিকে একদিন টহলরত সৈন্যরা গানবোট ভিড়িয়ে খর্নিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। খর্নিয়া ও পার্শ্ববর্তী শোভনা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তারা আবদুল জব্বার, আবদুল লতিফ, আমজাদ হোসেন এবং জগবন্ধুকে ধরে খর্নিয়া বাজারে নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে এ নিরীহ ৪ জনকে প্রথমে পাকিস্তানি সেনারা নির্যাতন এবং পরে খর্নিয়া বাজারে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে অন্তত ৩০ জনকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো বলে এখানে কোনো গণকবর নেই।
খর্নিয়ায় হত্যার শিকার যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- ললিত মল্লিক ওরফে নলে (ভদ্রদিয়া), জগবন্ধু সরকার (ভদ্রদিয়া), বিবেক সরদার (ভদ্রদিয়া), আলি বখশ্ ওরফে আলে (শোভনা), মনসুর শেখ (শোভনা), নিতাই চন্দ্ৰ বসাক (শোভনা), বাঞ্ছা হালদার (শোভনা), শাহজাহান শেখ (খর্নিয়া), আবদুল জব্বার (খর্নিয়া), আমজাদ সরদার (খর্নিয়া), আবদুল লতিফ (খর্নিয়া), ইউসুফ আলী শেখ (কুলবাড়িয়া), নওশের খান (আগারহাটি, যশোর) ও ওয়াহিদ (আগারহাটি, যশোর)। [দিব্যদ্যুতি সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড