খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিল গণহত্যা (কালীগঞ্জ, গাজীপুর)
খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিল গণহত্যা (কালীগঞ্জ, গাজীপুর) ১লা ডিসেম্বর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ১৪০ জন মানুষ শহীদ হন।
কালীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিমি উত্তর-পূর্ব দিকে খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিল অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১লা ডিসেম্বর এ জুট মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ঘোড়াশাল পাকবাহিনীর ক্যাম্পের পাশেই ন্যাশনাল জুট মিল অবস্থিত। জুট মিল থেকে হানাদার বাহিনীকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, এ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা নেই। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ন্যাশনাল জুট মিলের শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের কেউ- কেউ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন এবং কেউ-কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। জুট মিল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানা। মুক্তিযোদ্ধারা একবার মিলের ভেতর থেকেই ঘোড়াশাল হানাদার ক্যাম্পে গুলি করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু রেঞ্জের মধ্যে না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। মিলের ম্যানেজার কর্তৃক মিল মালিকের নিকট লেখা একটি চিঠি মিলের বিহারি নিরাপত্তা অফিসারের হস্তগত হয়। উক্ত চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার বিষয় লেখা ছিল। অবাঙালি সিকিউরিটি অফিসার চিঠিটি ঢাকা সেনানিবাসে পাঠিয়ে দেয়। চিঠি পেয়ে সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল সকাল ৮-৯টার দিকে ন্যাশনাল জুট মিলে আসে। প্রথমে তারা মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করতে উদ্যত হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে কেউ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় মর্মে আশ্বস্ত করলে পাকিস্তানি বাহিনী চলে যায়। অতঃপর হানাদার বাহিনী ন্যাশনাল জুট মিলের উত্তরে জামালপুর গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। হানাদার বাহিনীর উপস্থিতি জানতে পেরে কমান্ডার এম এ আজিজ ও গ্রুপ কমান্ডার ফরহাদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মোকাবেলা করার প্রস্ততি নেন। হানাদার বাহিনী জামালপুর বাশাইর বাজারে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে হানাদার বাহিনী পিছু হটে। তারা বিকেলে ন্যাশনাল জুট মিলে প্রবেশ করে অফিসার, কর্মচারী ও শ্রমিকদের সারিবদ্ধ করে দুই লাইনে দাঁড় করিয়ে আমগাছের নিচে স্টেনগান দিয়ে গুলি করে ১৪০ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। প্রশাসনিক অফিসার আবু তালিবসহ অনেক ঊর্ধ্বতন অফিসার এ গণহত্যার শিকার হন। হোসেন আহমেদ, রহিম, আবদুর রহমান প্রমুখ কোনোভাবে বেঁচে যান। গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলে ‘১৯৭১ শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [মু. নাজমুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড