খড়িবাড়ি গণহত্যা (পার্বতীপুর, দিনাজপুর)
খড়িবাড়ি গণহত্যা (পার্বতীপুর, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় মে মাসে। এতে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। পার্বতীপুর উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে খড়িবাড়ি গ্রামের অবস্থান। নদীর অপর তীরের বিশ্বনাথপুর বিহারিপাড়ার নেতা আব্দুল আজিজ, আব্দুর রশিদ, ছিদ্দিক এবং মোস্তফাপুরের বাঙালি রাজাকার- গহির মণ্ডল ও নুরুল আমিন পাকিস্তানি সেনাদের দোসর ছিল। তারা হানাদার বাহিনীকে এ গ্রাম আক্রমণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। উপজেলার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের আমবাড়ি ক্যাম্প থেকে মে মাসের এক শুক্রবার সকাল ৮-৯টার দিকে মোস্তফাপুর ইউনয়ন ও মমিনপুর ইউনিয়নে অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং গণহত্যা চালায়। এ-সময় তাদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক বিহারি ও রাজাকার ছিল। তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ, লুণ্ঠন এবং অনেকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের দেখে গ্রামের মানুষ এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে হানাদাররা যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করে। খড়িবাড়ি এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেক মানুষ এ গণহত্যার শিকার হন। গণহত্যায় শহীদ কয়েকজন হলেন- মোস্তফাপুর ইউনিয়নের খড়িবাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেন (৫৩) (পিতা দিল মামুন শাহ), নিরাশা মণ্ডল (৭২) (পিতা জহিরউদ্দিন মণ্ডল), হোসেন আলী (পিতা জপে মোল্লাহ), রহমান মোল্লা ওরফে শিলা মোল্লাহ (৫৭), জামাল মণ্ডল, মসো মোল্লা, আব্দুল গফুর মোল্লা (পিতা খিদির মোল্লা), তসরউদ্দিন মণ্ডল (পিতা খান মামুন মণ্ডল), জব্বার মণ্ডল (৬৫) (পিতা কহর মণ্ডল, রায়পুর, মোস্তফাপুর) ও মো. কেতাবউদ্দিন মণ্ডল (৫৯) (পিতা শাহেরুল্লাহ মণ্ডল, দুগলগাছি, মমিনপুর)। শহীদ মো. কেতাবউদ্দিন মণ্ডল নিজ বাড়ির খোলানের ইন্দারায় পানি 5 তোলার সময় পাকসেনাদের আসতে দেখে প্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের সময় গুলিবিদ্ধ হন। তার লাশ প্রাচীরে আটকে থাকে। এ গণহত্যায় পার্বতীপুর শহর থেকে খড়িবাড়ির জপে মোল্লার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড