You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম খন্দকার রেজানুর হোসেন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম খন্দকার রেজানুর হোসেন

খন্দকার রেজানুর হোসেন, বীর বিক্রম (১৯৫০- ১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালের ২রা জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খন্দকার হায়দার আলী এবং মাতার নাম সৈয়দা রোকেয়া বেগম।
খন্দকার রেজানুর হোসেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি সৈয়দপুর সেনানিবাসে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানির মেশিনগান প্লাটুনে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। ৩০শে মার্চ সন্ধ্যায় অন্যান্য বাঙালি সেনাসদস্যদের সঙ্গে খন্দকার রেজানুর হোসেনও পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হন। ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এদিন সারারাত হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধের পর তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
সেনানিবাস থেকে বের হয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাসদস্যরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে একত্রিত হন। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন (পরে ৩য় বেঙ্গলে যোগ দেন)। তাঁরা ৯, ১০, ১১ ও ১৯শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের কামারখালিতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সিলেট অঞ্চলে তাঁরা অসংখ্য এম্বুশ, গেরিলা যুদ্ধ ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। এসব যুদ্ধে রেজানুর হোসেন সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সিলেটের গোয়াইনঘাটে সুরমা নদীর পূর্বপাড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এ ঘাঁটিতে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, আজাদ কাশ্মীর ফোর্স, পাঞ্জাব রেঞ্জার ও টসি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে রাজাকার-রা অবস্থান করছিল। এছাড়া ছিল ফিল্ড ও মিডিয়াম আর্টিলারি। সুরমা নদী দ্বারা তিনদিক থেকে ঘেরা থাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় ছিল। ২৪শে অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘাঁটি আক্রমণের লক্ষ্যে সীমান্ত পেরিয়ে গোয়াইনঘাটের কাছাকাছি পৌঁছান। হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে শুধু খন্দকার রেজানুর হোসেনসহ কয়েকজন ছিলেন। তাঁরা হানাদারদের প্রতিহত করতে থাকেন। তাঁদের সাহসিকতাপূর্ণ লড়াইয়ে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মেশিনগানের অবস্থান চিহ্নিত করে ২ ইঞ্চি মর্টারের আক্রমণ চালায়। খন্দকার রেজানুর হোসেন মেশিনগান দিয়ে গুলি চালানো অব্যাহত রাখেন। হঠাৎ হানাদার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে খন্দকার রেজানুর হোসেনসহ দুজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্গে-সঙ্গে শহীদ হন। তাঁদের সাহসিকতায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শহীদ খন্দকার রেজানুর হোসেনকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড