কোল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
কোল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত। কসবার উঁচু পাহাড়ে একটি নিরিবিলি স্থানে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধকালে এটি নির্মিত। এর উদ্যোক্তা ছিলেন ক্যাপ্টেন এইচ এম আবদুল গাফফার, বীর উত্তম। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। উভয় পক্ষে বহু হতাহত হতে থাকে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। সীমান্তের অপর পাড় ভারতে দাফন করা হলে ভবিষ্যতে সমাধিস্থল পরিবার-পরিজনদের ভ্রমণসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে ভেবে ক্যাপ্টেন গাফফার বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে নিহত ব্রিটিশ সৈন্যদের কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের সন্নিকটে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট সড়কে উঁচু টিলায় নির্মিত সিমেট্রির মতো একটি সমাধি নির্মাণ করা স্থির করেন। অতঃপর তাঁর কোম্পানির সুবেদার মিয়া ইদ্রিস মিয়াকে স্থান নির্ধারণের দায়িত্ব দেন। কোল্লাপাথরের মালিক জনৈক আব্দুল মান্নান বিনামূল্যে তার এ জায়গা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের মতো মহৎ কাজে দান করতে সম্মত হন। স্থানটি উঁচু পাহাড়ে। এর মাথা কেটে সমতল করে সমাধি স্থান বানানো হয়। ক্যাপ্টেন আবদুল গাফফারের ব্যাটালিয়নের শহীদ হাবিলদার শামসুদ্দিনকে এখানে প্রথম কবর দেয়া হয়। এরপর এক এক করে সালদা নদী এলাকায় ৪৯ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সারিবদ্ধভাবে দাফন করা হয়। এর সৌন্দর্য রক্ষায় সুতা দিয়ে দাগ কেটে সারিবদ্ধভাবে সমদূরত্বে কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়। স্বাধীনতা- পরবর্তীতে দর্শনার্থীদের গাড়ি নিয়ে এ স্থানে পৌঁছা, থাকা, বিশ্রাম নেয়া, পবিত্র হয়ে কবর জিয়ারতের জন্য পুকুর খনন ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী এখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। কোল্লাপাথর শহীদ-সমাধিতে শায়িত ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন- সিপাহী দর্শন আলী (বালিয়াডাঙ্গি, ঠাকুরগাঁও), মো. জাকির হোসেন, বীর প্রতীক- (ঢাকা), মো. আব্দুল জব্বার (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), হাবিলদার তৈয়ব আলী (গহরপুর, সিলেট), ল্যান্স নায়েক আব্দুস সাত্তার, বীর প্রতীক, (সারিয়াকান্দি, বগুড়া), সিপাহি আক্কাস আলী (লাকসাম, কুমিল্লা), মো. ফকরুল আলম (কোল্লাপাথর, কসবা), সিপাহি মো. ফারুখ আহমেদ (কামালপুর, কসবা), মোজাহীদ নূর মিয়া (কুড়িঘর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), নায়েক মোজাম্মেল হক (ময়মনসিংহ), নায়েক সুবেদার মো. আব্দুস সালাম, বীর বিক্রম- (মধ্যম কাঁচা, নোয়াখালী), মো. নোয়াব আলী (কুড়িপাইকা, আখাউড়া), সিপাহি মুসলিম মৃধা (পাঁচগাঁও, ফরিদপুর), প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম (নড়িয়া, শরীয়তপুর), মো. আব্দুল অদুত (মন্দাবাদ, কসবা), সিপাহি তমিজউদ্দিন (মুরাদনগর, কুমিল্লা), মো. আবুল কাশেম (হোমনা, কুমিল্লা), মো. মোশারফ হোসেন (ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা), নায়েব সুবেদার মঈনুল হোসেন, বীর উত্তম- (রামপুর, কুমিল্লা), সিপাহি মো. নূরুল হক (মতলবগঞ্জ, চাঁদপুর), সিপাহি হুমায়ুন কবির (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা), মো. আব্দুল কাইয়ুম (বড় বায়েক, কসবা), ল্যান্স নায়েক মো. আব্দুল খালেক (নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান (নাথুরা, বগুড়া), সিপাহি মো. তারু মিয়া (চান্দলা, ব্রাহ্মণপাড়া), নায়েব সুবেদার বেলায়েত হোসেন, বীর উত্তম- (সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম), সিপাহি মো. রফিকুল ইসলাম (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি মো. মোরশেদ (লীলাখাদ, আখাউড়া), সিপাহি আশু রঞ্জন দে (ভৈরব বাজার, কিশোরগঞ্জ), সিপাহি মো. তাজুল ইসলাম (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি মো. শওকত (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি আব্দুস সালাম সরকার (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি আমির হোসেন (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি মো. জাহাঙ্গীর আলম (হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর), সিপাহি পরেশ চন্দ্র মল্লিক (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি মো. জামাল উদ্দিন (হোমনা, কুমিল্লা), সিপাহি আব্দুল আউয়াল (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি মো. আবেদ আহমেদ (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি সিরাজুল ইসলাম (ফতেহাবাদ, চট্টগ্রাম), সিপাহি ফরিদ মিয়া (হোমনা, কুমিল্লা), সিপাহি মতিউর রহমান (বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি সাকিল মিয়া (বুড়িচং, কুমিল্লা), আনসার ইলাহী বক্স পাটোয়ারী, বীর প্রতীক- (বিজয়পট্টি, চাঁদপুর), সিপাহি শহীদুল হক (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি আনোয়ার হোসেন (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সিপাহি আব্দুল বারী খন্দকার (দেবীদ্বার, কুমিল্লা) এবং অজ্ঞাত পরিচয় ৩ জন। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র: এইচ এম আব্দুল গাফফার, বীর উত্তম, স্মৃতিময় মুক্তিযুদ্ধ ও আমার সামরিক জীবন, প্রথমা ২০১৬, পৃ. ৯৬-৯৮; ঐ, পরিশিষ্ট পৃ. ২১৪-২১৬
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড