কোদালকাটি যুদ্ধ (রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম)
কোদালকাটি যুদ্ধ (রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম) সংঘটিত হয় ১লা অক্টোবর। কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলায় কোদালকাটি ইউনিয়ন অবস্থিত। এর পূর্বে সোনাভরি নদী, উত্তরে হলহলিয়া নদীর শাখা, দক্ষিণে সোনাভরি নদী এবং পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত। কোদালকাটির উত্তরে হাজীর চর, ঠাকুরের চর, পূর্বে কোমরভাঙ্গি, মরিচাকান্দি এবং দফাদারের চর (চর সাজাই) গ্রামগুলোর অবস্থান। এপ্রিল-মে মাস থেকেই কোদালকাটির উত্তর দিকের অঞ্চলে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের ৩য় বেঙ্গল এবং দক্ষিণের অঞ্চলে আফতাব বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল।
পাকবাহিনী প্রায়শ কামান এবং মর্টারের গোলাগুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের তটস্থ রাখত। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় ২৫শে সেপ্টেম্বর আফতাব বাহিনীর বাছাই করা ৭২ জন মুক্তিযোদ্ধা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শংকর মাধবপুর গ্রামে বাংকার করে সাজাই গ্রামের দক্ষিণ থেকে খড়িয়াডাঙ্গা পর্যন্ত ৩ কিমি ব্যাপী এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁদের সঙ্গে পূর্বদিকে ভারী মেশিনগান নিয়ে ফার্স্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৭ জনের একটি প্লাটুন অবস্থান গ্রহণ করে। পাড়ার বাড়িতে তৈরি ১২টি বাংকারের প্রতিটিতে ৬ জন করে এবং পশ্চিমের একটিতে ওস্তাদ কালাম, একটিতে শওকত আলী (পরবর্তীতে বীর বিক্রম) ও মো. আব্দুস সবুর ফারুকী, একটিতে আলতাফ সামাদ অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানতে পেরে পাকবাহিনী প্রতিদিন তাদের ওপর গুলি করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। ১লা অক্টোবর পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর একযোগে আক্রমণ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধ ২রা অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত চলে। তবে একদিকে ভারী অস্ত্রসহ পাকবাহিনীর নিয়মিত ৭০০-৮০০ সৈন্য, অপরদিকে হালকা অস্ত্রসহ ১০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে বাংকার থেকে গুলি করায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন কমান্ডারের নির্দেশে এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বদিকে সোনাভরি নদীর পাড়ে চলে আসেন। নদীর পূর্বপাড়ে আফতাব বাহিনীর হাবিলদার বাদল নৌকা দিয়ে তাঁদের স্থায়ী অবস্থান মদনের চরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এভাবে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে পশ্চাদপসরণ করেন। যুদ্ধের শেষদিকে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো অবস্থান দখল করে নেয়। কিন্তু তখন বাংকারগুলো ছিল শূন্য। যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় ১৫০ জন সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা সামাদ এবং আলতাফ (দাড়িয়াপুর, গাইবান্ধা) আহত অবস্থায় শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়েন। পাকসেনারা নির্মম নির্যাতন করে তাঁদের হত্যা করে। এ-যুদ্ধের একদিন পর ৪ঠা অক্টোবর পাকবাহিনী কোদালকাটি ত্যাগ করে চিলমারী চলে যায়। [মো. আব্দুস সবুর ফারুকী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড