বীর প্রতীক কে এস এ মহিউদ্দিন মানিক
কে এস এ মহিউদ্দিন মানিক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালের ২১শে নভেম্বর বরিশাল জেলার বগুড়া রোডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী মনোয়ার হোসেন এবং মাতার নাম আনোয়ারা বেগম। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠী জেলার নবগ্রামের বীরসেনা গ্রামে। তাঁর পিতা ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বরিশাল এ কে স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং বরিশাল হাতেম আলী কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং বরিশাল রাইফেলস ক্লাব ও মুকুল ফৌজের সদস্য হন। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোলন, ৬- দফা ও ১১-দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান-এ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর সময় তিনি রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। ভাষণ শুনে তিনি খুবই উদ্বুদ্ধ হন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য মনে-মনে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর বরিশাল পুলিশ লাইন্স থেকে অস্ত্র দখলে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ২৬শে মার্চ বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ‘স্বাধীন বাংলা সরকারের দক্ষিণাঞ্চলীয় সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি সেখানে যোগ দেন। ২৬শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী বরিশাল শহর দখল করে নিলে পুলিশ লাইন্স থেকে প্রাপ্ত অস্ত্র নিয়ে তিনি বানারীপাড়া যান। সেখানে বেনীলাল দাশগুপ্ত, মোসলেম মল্লিক, আবদুস ছত্তার, হায়দার আলী, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখকে নিয়ে গাভায় কমলা রানীর বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প স্থাপন করেন। উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠায় সাব-সেক্টর কমান্ডের হেডকোয়ার্টার্স স্থাপিত হলে ১০ই সেপ্টেম্বর তিনি সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তী সময়ে বরিশাল, ঝালকাঠী ও পিরোজপুরে শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে কয়েকটি যুদ্ধ ও অপারেশনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেগুলোর মধ্যে ইন্দিরহাট যুদ্ধ, বিন্না যুদ্ধ, মানপাশা যুদ্ধ, বাবুগঞ্জ থানা যুদ্ধ, গাবখান যুদ্ধ, চাচৈর যুদ্ধ, রাজাপুর থানা যুদ্ধ ও বাকেরগঞ্জ থানা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। চাচৈর যুদ্ধ এবং বাকেরগঞ্জ থানা যুদ্ধে তিনি আহত হন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন এবং বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা-উত্তর সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে স্ত্রী কামরুন্নাহার নাজনীন, এক পুত্র, এক কন্যাসহ তিনি বরিশালে বসবাস করছেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড