কেতনার বিল গণহত্যা (আগৈলঝাড়া, বরিশাল)
কেতনার বিল গণহত্যা (আগৈলঝাড়া, বরিশাল) সংঘটিত হয় ১৫ই মে। আগৈলঝাড়া সদর থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে কেতনার বিল অবস্থিত। এখানকার গণহত্যায় সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হন।
১৪ই মে নবগ্রাম (কালকিনি) ও দোনারকান্দি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এ সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুরঘাটা থেকে পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন করতে দোনারকান্দি, রামসিদ্ধি, রাজিহার হয়ে রাংতা পৌঁছায়। পাশাপাশি তাদের আরেকটি দল গৌরনদী থেকে চাঁদশী হয়ে রাংতা পৌঁছায়। পথে তারা কয়েকটি বাড়ি আক্রমণ করে গণহত্যা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ ও আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আশপাশের গ্রাম থেকে সহস্রাধিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিলের মধ্যে পাত্র বাড়িতে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় রাজাকার- গণি বেপারী ও ইউসুফ দফাদারের দেখানো পথে হানাদার বাহিনী কেতনার বিলের পাত্র বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং গণহত্যা চালায়। পাত্র বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে তারা কেতনার বিলের আউশ ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়া ঢাকা মেডিকেলের ২য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র স্বপন বসু এবং তাঁর দুই বোন যুথি ও শেফালীকে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনী এখানে বরিশাল থেকে আসা দুটি পরিবারের ১২ জন এবং ধানক্ষেতে কর্মরত ৯ জন দিনমজুরকে গুলি করে হত্যা করে। এ গণহত্যায় সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হন। অমূল্য পাত্র (৯১) এ গণহত্যার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। পাকিস্তানি হানাদর বাহিনী চলে যাওযার পর অমূল্য পাত্রসহ কয়েকজন পুকুরপাড়ে গর্ত করে শতাধিক লাশ গণকবর দেন। বেপারী বাড়িতে বেশ কয়েকজনকে গণকবরে সমাহিত করা হয়। পরিচিত কাউকে- কাউকে তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে সমাহিত করে। তবে দূর-দূরান্ত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আগত সকল শহীদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। কেতনার বিল গণহত্যায় ১০২ জন শহীদ গ্রামবাসীর পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- রাংতা গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (৪৫) (পিতা হাবিবুর রহমান), মৈজদ্দিন হাওলাদার (৪৫) (পিতা আবদুল কাদির হাওলাদার), হোসেন বেপারী (৩০) (পিতা ফৈজদ্দিন বেপারী), তালেব বেপারী (৩৫) (পিতা এছিন বেপারী), আবদুল হক ফকির (৪০) (পিতা নোয়াব আলী ফকির), ফরহাদ ফকির (২৫) (পিতা ডা. জোনাব আলী), রশিদ ফকির (৩০) (পিতা ডা. জোনাব আলী), শ্রীমন্ত পাত্র (৩৫) (পিতা অধর পাত্র), অধর পাত্র (৫৫) (পিতা গোকুল পাত্র), চৈতন্য (৫) (পিতা শ্রীমন্ত পাত্র), শম্ভু বৈদ্য (২০) (পিতা রামচরণ বৈদ্য), রাজবিহারী বৈদ্য (২৫) (পিতা রাইচরণ বৈদ্য), কৃষ্ণকান্ত বৈদ্য (৩৫) (পিতা উপাচরণ বৈদ্য), বিমল বেপারী (৪০) পিতা (বিনোদ বেপারী), নিতাই বেপারী (৩৫) (পিতা মাধব বেপারী), নিবারণ বিশ্বাস (২৫) (পিতা গোপাল বিশ্বাস), মঙ্গল পাত্র (৩০) (পিতা বিহারী পাত্র), বিনোদ পাত্র (৪০) (পিতা দশরথ পাত্র), কাশীনাথ পাত্র (৫০) (পিতা পতকী পাত্র), মতি পাত্র (৪৫) (পিতা সত্যানন্দ পাত্র), মোহন পাত্র (৩৫) (পিতা রাহুল পাত্র), বিপুল পাত্র (১০) (পিতা কার্তিক পাত্র), সাজু বিবি (৩০) (স্বামী আফেরউদ্দিন মোল্লা), সাহেদা বেগম (২৫) (স্বামী আ. রহমান মোল্লা), চান বরু (৪০) (স্বামী হাশেম মোল্লা), সানু আক্তার (২০) (পিতা সফি মোল্লা), মালতী রানী (২৮) (স্বামী রাম প্রসাদ), শোভা রানী (৫) (পিতা রাম প্রসাদ), বকুল রানী (৮) (পিতা বিনোদ বেপারী), গীতা রানী (২৫) (স্বামী অধর পাত্র), কানন রানী (২০) (স্বামী বিনোদ পাত্র), কানলী (৩) (পিতা বিনোদ পাত্র), গীতা রানী পাত্র (১৫) (পিতা বিনোদ পাত্র), সরস্বতী পাত্র (৩৫) (স্বামী মঙ্গল পাত্র), বিজয়া (২০) (স্বামী দেবেন্দ্র পাত্র), বেস লক্ষ্মী (৩০) (স্বামী লক্ষ্মীকান্ত পাত্র), ত্রিফুলী পাত্র (৪০) (স্বামী কার্তিক পাত্র), মঞ্জু রানী (১৮) (পিতা কার্তিক পাত্র), বিষ্ণু পাত্র (৭) (পিতা কার্তিক পাত্র), ফুলি (৫৫) (ভিক্ষুক), রামসিদ্ধি গ্রামের নারায়ণ ভূঁইয়া, নারায়ণ ভূঁইয়ার স্ত্রী (৪০), গীতা ভূঁইয়া (পিতা নারায়ণ ভূঁইয়া), অতুল পাল, অতুল পালের মা (৬০), নারায়ণ পাল (৬৫), রজনী, বসন্ত নন্দীর স্ত্রী, সুদেব বেপারী (৩৫), সেকন্দার বেপারী (৬৫), তারাকুপি গ্রামের রমেশ চন্দ্র কাপালী (৫৫), পুরোহিত সচীন্দ্র নাথ ভূঁইয়া, গৌরনদী উপজেলাধীন চাঁদশীর সাবিত্রি ঘরামী (৩০) (স্বামী রজনী কান্ত ঘরামী), নিভা ঘরামী (১০) (পিতা রজনী কান্ত ঘরামী), মনিকা রানী ঘরামী (৩০) (স্বামী রঞ্জন ঘরামী), হরিবালা বাড়ৈ (২৫) (স্বামী কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈ), অঞ্জলি বাড়ৈ (৭) (পিতা কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈ), কাজলী বাড়ৈ (৫) (পিতা কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈ), পরিমল দে (পিতা বসন্ত দে), পুতুল বরকন্দাজ (পিতা বিনোদ বরকন্দাজ), বুথি বরকন্দাজ, (পিতা সুরেশ বরকন্দাজ), বগেলা বাছার (পিতা কাশীশ্বর বাছার), সুরেন্দ্র ভট্টাচার্য (পিতা বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য), রাধেশ্যাম (২২) (পিতা রাখাল কর; ছাত্র), মালতী বেপারী (স্বামী ভগীরথ বেপারী), বিজয়া রানী (২৫) (স্বামী মনোরঞ্জন), বুড়ি বেপারী (১০) (পিতা নিরঞ্জন বেপারী), অমিত দাস (২৫) (পিতা জয়দেব দাস), প্রকাশ দাস (৩০) (পিতা পরিমল দাস), বসন্ত দাস (৬০), রজনী পাল (৬৫), অক্ষয় চক্রবর্তী (৭০), লেবু গোমস্তা (৩০), রেনুকা বালা (৩০) (স্বামী অক্ষয় কুমার মণ্ডল), বিহারী সিকদার (৬০), রাখাল কর (৩৫) (পিতা রজনী কর), কাশীরাম কর (৩০) (পিতা রজনী কর), স্বপন কুমার বসু (২২) (পিতা মুকুন্দ নাথ বসু; ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র), যুথিকা বসু (১৯) (পিতা মুকুন্দ নাথ বসু; ছাত্রী), শেফালী বসু (১৬) (পিতা মুকুন্দ নাথ বসু, ছাত্রী), মায়া ভট্টাচার্য (২৬) (স্বামী নিকুঞ্জ ভট্টাচার্য), ননী বালা (৪০) (স্বামী সুবোধ চক্রবর্তী), শঙ্কর (১৫) (পিতা সুবোধ চক্রবর্তী), দুর্গা বরকন্দাজ (১৭) (পিতা ঈশ্বর বরকন্দাজ), রেনুকা আচার্য (৩৮) (স্বামী হারান চক্রবর্তী), প্রকাশ চন্দ্ৰ দাস (৬৫) (পিতা আনন্দ দাস), জয়দেব (৯) (পিতা প্রকাশ চন্দ্ৰ দাস), অনন্ত গাইন (৪৫), খোকন (৫) (পিতা অনন্ত গাইন), অন্ন বেপারী (৩৫) (স্বামী ভগীরথ বেপারী), সরস্বতী বেপারী (৫) (পিতা ভগীরথ বেপারী), কেশব দত্ত (৪০) (পিতা রজনী কান্ত দত্ত), মনিবালা দত্ত (৩০) (স্বামী কেশব দত্ত), কুঞ্জ বিহারী দত্ত (৪৫) (পিতা তারাচাঁদ দত্ত), লেমন সুন্দরী (৪০) (স্বামী সদানন্দ বাড়ৈ), শ্যামল বাড়ৈ (১২) (পিতা সদানন্দ বাড়ৈ), সেবাইত সুবোধ চন্দ্ৰ ভূঁইয়া (বার্থী, গৌরনদী), গীতা রানী চক্রবর্তী (স্বামী নিতাই চক্রবর্তী, টরকী, গৌরনদী), সুভাষ চক্রবর্তী (পিতা নিরোদ চক্রবর্তী, টরকী, গৌরনদী), ললীতা সুন্দরী মাল (স্বামী হরেন মাল, ধুরিয়াল, গৌরনদী), নিকুঞ্জ ভট্টাচার্য (বরিশাল) ও মায়া রানী ভট্টাচার্য (স্বামী নিমচাঁদ চক্রবর্তী, বরিশাল)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড