কান্দাপাড়া গণহত্যা (নরসিংদী সদর)
কান্দাপাড়া গণহত্যা (নরসিংদী সদর) সংঘটিত হয় ৯ই এপ্রিল এবং এতে ১৭ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালানোর পর পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী নরসিংদী প্রবেশের চেষ্টা করে। এ উদ্দেশ্যে তারা ৯ই এপ্রিল রওনা করে ঢাকা-নরসিংদী রোডের বাগবাড়ি-কড়ইতলা নামক স্থানে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। কারণ ঢাকার হামলায় বিপর্যস্ত কিছু বাঙালি ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্য ৮ই এপ্রিল এখানে এসে প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করেন। ফলে পাকবাহিনী এখানে পৌছামাত্র ৯ই এপ্রিল দুপুরের আগে উভয় পক্ষে শুরু হয় যুদ্ধ। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রবল যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রশস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে বাঙালি সৈনিকরা পশ্চাদপসরণ করে পাঁচদোনা ব্রিজের পূর্বপাশে পাল বাড়িতে গিয়ে ক্যাম্প করেন। অন্যদিকে বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় পাকবাহিনীও পিছু হটে। পিছু হটার পূর্বে তারা কান্দাপাড়া, নওয়াপাড়া, রাইন্যাদি ও খোর্দনাপাড়া গ্রামে ঢুকে পলায়নরত ১৭ জন সাধারণ মানুষকে কান্দাপাড়ায় গুলি করে হত্যা করে। কান্দাপাড়ায় বেড়াতে আসা সাইফুল মিয়া নামে জনৈক ব্যক্তি পাকবাহিনী গুলি শুরু করার এক পর্যায়ে তাদের একজনের রাইফেল চেপে ধরে টানাটানি করতে থাকে। এ-সময় অপর একজন সৈন্য গুলি করে তাকে হত্যা করে। হত্যার শিকার এসব গ্রামবাসীর লাশ দুদিন পর গ্রামের কিছু লোক একত্রিত করে জানাজা পড়ে ১৪টি লাশ দেবালের টেকের সুখাই প্রধানের বাড়ির নিকট একটি কবরে সমাহিত করে। বাকি ৩ জনকে আলাদা-আলাদাভাবে কবর দেয়া হয়। কান্দাপাড়া গণহত্যায় শহীদরা হলেন- সামসুদ্দিন (রাইনাদি), সাইফুল মিয়া (জোয়ারিয়াকান্দি), গেছু মিয়া, সোনা মিয়া, হারিছ মিয়া, নজুমদ্দিন, কালাই মিয়া, আজগর আলী, হযরত আলী, আমির আলী, আবুল হোসেন, আ. ছামাদ, জামাল উদ্দিন, চান মিয়া, আজ্জত আলী, আলী বক্স, ইদ্রিস আলী। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড