কাড়াপাড়া গণহত্যা (বাগেরহাট সদর)
কাড়াপাড়া গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) সংঘটিত হয় ২৪শে এপ্রিল। এতে শতাধিক লোক প্রাণ হারান। পাকবাহিনী সর্বপ্রথম বাগেরহাটে অনুপ্রবেশ করে ২৪শে এপ্রিল। খুলনা থেকে গানবোট নিয়ে তারা পুঁটিমারী খালের
মধ্য দিয়ে মির্জাপুর গ্রামে আসে। এ গ্রাম থেকে বাগেরহাটে যেতে কাড়াপাড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পাকবাহিনী এদিন কাড়াপাড়া ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে নজিরবিহীন সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং শতাধিক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পাকবাহিনী মির্জাপুর গ্রামে নেমে প্রথমে ঘোলবিক্রেতা মনোহর পালকে বেয়নেট চার্জ ও গুলি করে হত্যা করে। এরপর একে-একে মেঘনাদ পাল, নগেন্দ্র নাথ সাহা, নিত্যানন্দ সাহা ও গৌরপদ সাহাকে বেয়নেট চার্জ করে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। বেয়নেট চার্জের ফলে মারাত্মকভাবে আহত হন কালীপদ সাহা ও রুহিদাস সাহা।
এরপর হানাদার পাকসেনারা কাড়াপাড়া গ্রামে ঢোকে। এ গ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আমজাদ হোসেনের আত্মীয় শেখ আজিজুল হকের বাড়ি ছিল। এ বাড়িতে ঢুকে তারা আজিজুল হকসহ ৫ জনকে হত্যা করে। পাশের নিকারি বাড়িতে ঢুকে পাকবাহিনী একে-একে সুলতান মিয়া, রাঙ্গা মিয়া, সোনাউল্লাহ, মানিক মিয়া, উকিল উদ্দিন, লেহাজ উদ্দিন, আহম্মদ, মোবারক, আম্বা আলী, আবদুল মালেক, বড় বিবি, আজাহার জমাদ্দার, সিরাজ হাওলাদার প্রমুখকে হত্যা করে। পাকবাহিনীকে দেখে বড়ু বিবি একটি শিশুকে নিয়ে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। পাকসেনারা তাকে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা করে।
কাড়াপাড়া গণহত্যার পর পাকবাহিনী দশানি গ্রামের মধ্য দিয়ে বাগেরহাটের দিকে এগোতে থাকে। পথে তারা শঙ্কর পুকুরের পাশে একজনকে হত্যা করে। এরপর কাড়াপাড়ার হামানের পোলের কাছে খোকাকে, নুর মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও খাদেম মো. মোজাহার মুন্সীকে, নুর মসজিদের কাছে আদম আলীকে, রেডিও মেকার আশ্বাব আলীকে, বিএসসি- র ছাত্র আবদুল ওহাবকে, হরিণখানার মো. হুমায়ুনকে, ফুলতলা মোড়ে আবদুল খালেককে এবং ৩ জন রিকশাওয়ালাকে গুলি করে হত্যা করে। এদিন তারা বাগেরহাট শহরে ঢুকে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। [স্বরোচিষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড