আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য বীর বিক্রম কাজী কামাল উদ্দীন
কাজী কামাল উদ্দীন, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪৬) আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গাজীপুর জেলাধীন কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর গ্রামে ১৯৪৬ সালের ১১ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী রইস উদ্দীন আহমেদ এবং মাতার নাম সুরাইয়া বেগম। ১৯৭১ সালে তিনি শিক্ষার্থী এবং একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন।
২৫শে মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে কাজী কামাল উদ্দীন কয়েকজনের সঙ্গে ভারতের আগরতলায় যান। সেখানকার একটি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্যাপ্টেন হায়দারের নেতৃত্বে আত্মঘাতী
স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণের পর এ দলটিকে ঢাকা ও তার আশপাশে গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে দখলদার বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। ঢাকায় প্রবেশের পর তাঁদের দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড ও গেরিলা অপারেশনে পাকহানাদার বাহিনীর ভিত নড়ে ওঠে। এতে সাংবাদিক, দাতা সংস্থা ও বাংলাদেশে অবস্থানরত অন্যান্য বিদেশীরা পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
২৫শে আগস্ট সকালে কাজী কামাল উদ্দীনসহ চারজনের একটি দল প্রাইভেট গাড়িতে করে ধানমন্ডির ১৮নং রোডে জাস্টিস জব্বার খানের বাড়ির সামনে এক ঝটিকা আক্রমণের মাধ্যমে সেখানে প্রহরারত ৭-৮ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এ অপারেশন শেষে ৫নং রোড দিয়ে ফেরার পথে তাঁরা দেখেন সেখানে কয়েকজন পাকসেনা চলমান গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে। সঙ্গে-সঙ্গে তাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন হাবিবুল বাসার, বীর প্রতীক। পাকসেনারা তাঁদের গাড়ি থামাবার নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে-সঙ্গে হাবিবুল বাসার প্রথমে ডান দিকে ও পরে বাম দিকে টার্ন নেন এবং তৎক্ষণাৎ গাড়িতে বসা কাজী কামাল, বদি ও স্বপনের অস্ত্র গর্জে ওঠে। নিমেষে এক সেনাকর্মকর্তাসহ সেখানে ডিউটিরত সকল সেনাসদস্য নিহত হয়। পরপর দুটি সফল অভিযান সম্পন্ন করে তাঁরা সবাই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হন।
কাজী কামাল ২৯শে আগস্ট সদলবলে বড় মগবাজারে অবস্থানকালে অকস্মাৎ পাকবাহিনী তাঁদের ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এক হানাদার সদস্যের স্টেনগান ছিনিয়ে নিয়ে অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে কয়েকজন শত্রুসেনাকে হত্যা করে নিরাপদে স্থান ত্যাগ করতে সক্ষম হন।
মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কাজী কামাল উদ্দিনকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যার জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম খাদিজা কামাল। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড