বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ
কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ (১৯০৮-১৯৮২) পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনি ১৯০৮ সালের ২৩শে নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের (বর্তমান পাকিস্তানের) সিন্ধু প্রদেশের নওয়াবশাহ জেলার হাল্লানি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি সিন্ধু হরি কমিটিতে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু এ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সিন্ধুর হরিজন সম্প্রদায় ও শ্রমিক শ্রেণির উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারত ছাড় আন্দোলন, সাইমন কমিশন বিরোধী কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সমাজসংস্কারক ও সিন্ধুর কৃষক নেতা কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ রাজনীতির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পুস্তক রচনা করেন। তিনি ১৯৮২ সালের ১৩ই অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ফয়েজ মোহাম্মদ নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পশ্চিম পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নির্ভরযোগ্য সহযোগী ছিলেন। একাত্তরে তিনি পাকিস্তানের অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে গোপনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান করেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গণহত্যার বিরুদ্ধে ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই তিনি বিনা পাসপোর্টে গোপনে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বাধীন বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পাকিস্তানি হয়েও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমাপ্রার্থনার তিনি দৃঢ় সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড