কাচালং নদীতীরের যুদ্ধ (বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি)
কাচালং নদীতীরের যুদ্ধ (বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি) সংঘটিত হয় ২২শে নভেম্বর। এতে ৩ জন সাধারণ মানুষ ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী-র ২ জন শহীদ হন। অপরপক্ষে পাকবাহিনীর সহযোগী মিজো বাহিনীর অনেকে আহত হয়। বর্তমান বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাধীনতার পূর্বে ‘মারিশ্যা’ নামে পরিচিত ছিল। রাঙ্গামাটি সদর থেকে প্রায় ১৪০ কিমি দূরে এটি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। বিস্তীর্ণ এলাকা এবং রিজার্ভ ফরেস্ট নিয়ে মারিশ্যা গঠিত। এর সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঞ্চলের নাম মিজোরাম। কাচালং নদীপথে ম্যারিশ্যায় যাতায়াত করতে হতো। ভারতের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র মিজো বিদ্রোহীরা পাকিস্তান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সীমান্ত অতিক্রম করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)-এর অভ্যন্তরে বসবাস করত। ১৯৭১ সালে পাকসেনাদের সহযোগী হিসেবে মিজো বাহিনী তাদের নেতা লালডেঙ্গার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারা মারিশ্যাসহ রাঙ্গামাটি সদর, লংগদু ও দিঘীনালা উপজেলায়ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কর্নেল বোগরাজ, মেজর মালহোত্রা ও ক্যাপ্টেন বলদান সিং-এর নেতৃত্বে তিব্বতীয় বাহিনী এবং বাংলাদেশের কমান্ডার অজয় মারমা (খাগড়াছড়ি, সাবেক যুগ্ম-সচিব) এবং কমান্ডার মো. মমিনুল ইসলাম (রংপুর)-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ২২শে নভেম্বর মারিশ্যা সদরে উপস্থিত হয়ে কাচালং নদীর পাড় ধরে নদীতীরবর্তী দূরছড়ি বাজারের দিকে অগ্রসর হন। মিজো বাহিনী এই যৌথ বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার খবর পেয়ে দূরছড়ি বাজারের আশে-পাশে অবস্থান নিয়ে তাঁদের অপেক্ষায় থাকে। এ-সময় মিজো বাহিনী বেসমারিক লোকজনকে নিজেদের বাসা, বাংকার কিংবা গর্তে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করে। তারপরেও ভারতীয় তিব্বতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিজো বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলে উভয় পক্ষের পাল্টা-পাল্টি গুলিতে ৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে নিহত হন। তারা হলেন- মোসা. মোস্তাফা খাতুন (স্বামী নাজিরুজ্জামান), চিনু ভট্টাচার্য (পিতা বগলাভূষণ ভট্টাচার্য) এবং সোনা বড়ুয়া (পিতা রুহিনী রঞ্জন বড়ুয়া)।
যুদ্ধে ভারতীয় তিব্বতীয় বাহিনীর ২ জন সদস্য শহীদ হন। অপরদিকে মিজো বাহিনীর অনেকে গুরুতর আহত হয়। শেষ পর্যন্ত মিজো বাহিনী পরাজিত হয়ে আহতদের নিয়ে গভীর অরণ্যঘেরা পাহাড়ে পলায়ন করে। ফলে মারিশ্যা মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তে আসে এবং এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। [স্বপন কুমার দে]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড