কাজিপুর থানা আক্রমণ (কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ)
কাজিপুর থানা আক্রমণ (কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ) পরিচালিত হয় তিনবার – ১০ই সেপ্টেম্বর, ২রা ডিসেম্বর ও ৩রা ডিসেম্বর। এতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরদিকে বেশ কয়েকজন হানাদার সৈন্য নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে গেলে উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে কাজিপুর উপজেলা অন্যতম। এর পূর্বদিকে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি, পশ্চিমে ধুনট, দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ সদর এবং উত্তরে বগুড়ার ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলা। মুক্তিযোদ্ধারা থানাকে শত্রুমুক্ত করা এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সেপ্টম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একবার এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দুবার মোট তিনবার কাজিপুর থানা আক্রমণ করেন। ১০ই সেপ্টেম্বরের আক্রমণ সফল না হওয়ায় তাঁরা পুনরায় থানা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। ২রা ডিসেম্বর সেটি সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি গ্রুপের একটি পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন খ ম আখতার হোসেন, ফজলুর মতিন মুক্তা, সাইদুর, লুৎফর রহমান দুদুসহ প্রায় ৯০ জন। অন্য গ্রুপ দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ করে। এ গ্রুপে ইসহাক তালুকদার, জুড়ান, সরোয়ারসহ ১৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দক্ষিণে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের এ গ্রুপটি দুটি দায়িত্ব পালন করে একদিকে দলকে প্রস্তুত রাখা যাতে থানা আক্রমণের খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আরো পাকিস্তানি সৈন্য কাজিপুরে ঢুকতে না পারে, অপরদিকে থানা আক্রমণ।
মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বেই রেকি করে জানতে পারেন সে-সময় থানায় ৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য, ৩১ জন পাকিস্তানি রেঞ্জার, ১৫-১৬ জন পুলিশ এবং কিছু রাজাকার মিলে ৭০-৮০ জন অবস্থান করছিল। দুপুর আনুমানিক দেড়টায় মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ করেন। থানায় অবস্থান নেয়া পাকিস্তানি বাহিনী আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা থানার বাংকার লক্ষ করে গুলি শুরু করলে পাকিস্তানি বাহিনী মর্টার ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশকিছু সদস্য হতাহত হয়। অপরদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে চান মিয়াসহ দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী বাংকারে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে এবং মুক্তিযোদ্ধারা সেদিনের মতো যুদ্ধ স্থগিত করেন। ৩রা ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা আবার কাজিপুর থানা আক্রমণ করেন। লুৎফর রহমান দুদু ও খ ম আকতারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে এবার ৪-৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য মারা যায়। হঠাৎ পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান দেখে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। তখন পাকিস্তানি বাহিনী থানার পূর্বদিকের যমুনা নদী দিয়ে পালিয়ে যায়। এভাবে কাজিপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। কাজিরপুরের আলমপুর চৌরাস্তায় একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [সুম্মিতা রানী দাস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড