You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.06 | কলাপাড়া গণহত্যা (সিলেট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

কলাপাড়া গণহত্যা (সিলেট সদর)

কলাপাড়া গণহত্যা (সিলেট সদর) সংঘটিত হয় ৬ই এপ্রিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-রা এ গণহত্যা চালায়। এতে ১৮ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। কলাপাড়ায় উড়িয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করত। তাই এটিকে উড়িয়াপাড়াও বলা হতো। ঘটনার দিন বিকেল ৩টায় পাকিস্তানি সেনাদের একটি বড় দল কলাপাড়ায় আসে। তারা এলাকার মানুষদের তাদের তাঁবুতে যেতে বলে। কিন্তু তাদের নির্দেশে কেউ সাড়া না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাড়ি-বাড়ি ঢুকে লোকজনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে একটি বাড়ির সামনে জড়ো করে। তারপর তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে কারো হাত-পা ভেঙ্গে যায়, কারো পাঁজর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তখন অনেকে মৃত্যুর প্রহর গুণছিল। এক সময় তাদের হিন্দু ও মুসলমান এই দুভাগে ভাগ করা হয়। মুসলমানদের মুক্তি দিয়ে হিন্দুদের টিলার ওপর নিয়ে যায়। সেখানে তাদের দৌড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দৌড়ানোর সামর্থ্য ছিল না অনেকেরই। এ অবস্থায় লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এখানে পাকবাহিনীর গুলিতে নিহতরা হলো- কালিয়া উড়িয়া, নকুল উড়িয়া, সধ্ব উড়িয়া, নিমাই উড়িয়া, সাইবা উড়িয়া, ছানিয়া উড়িয়া, বীরা উড়িয়া, বেণী উড়িয়া, ছকুরিয়া উড়িয়া, বুধিয়া উড়িয়া, নিতাই উড়িয়া, মন্নিধর উড়িয়া, লালা উড়িয়া, বলিয়া উড়িয়া, রমন উড়িয়া, চকু উড়িয়া এবং কন্টি সাধুর দুই ছেলে।
হত্যাকাণ্ডের পর পাকবাহিনী কলাপাড়ায় লুণ্ঠন চালায়। লুটপাটের পর তারা আগুন লাগিয়ে উড়িয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভস্মীভূত করে দেয়। পাড়ার প্রতিটি যুবতী মেয়েকে তারা ধর্ষণ করে। এ সময় পাক হানাদারদের সমর্থন যোগায় আব্দুন নুর নামক এক দালাল। নুরের প্ররোচনায় নরপশুরা আইনুদ্দিনের বাড়িতে যায়। তাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে উদ্যত হলে আইনুদ্দিন স্ত্রীসহ কৌশলে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হয়। তবে এদিন পাকবাহিনী ও রাজাকাররা মাক্কু মিয়াকে হত্যা করে। এ-সময় চৌধুরী নামক এক ব্যক্তি পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. সামসুদ্দিন আহমদ তার চিকিৎসা করেন। এজন্য ডা. সামসুদ্দিনের ওপর হানাদার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়। তারা প্রতিশোধ নিতে ৯ই এপ্রিল ডা. সামসুদ্দিনকে হত্যা করে। [মো. মুহিবুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড