You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | করিমপুর যুদ্ধ (ফরিদপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

করিমপুর যুদ্ধ (ফরিদপুর সদর)

করিমপুর যুদ্ধ (ফরিদপুর সদর) সংঘটিত হয় ৯ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। এ-যুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অন্যদিকে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়।
ফরিদপুর জেলার সদর থানার একটি গ্রাম করিমপুর। ফরিদপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ফরিদপুর-কানাইপুর সড়কের পাশে এ গ্রামের অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা করিমপুরের কাছে ফরিদপুর-কানাইপুর সড়কে অবস্থান নেন। ঘটনার দিন সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পাকসেনাদের একটি গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড চার্জ করলে গাড়িটি উড়ে যায়। একটি গাড়ি আক্রান্ত হলেও পাকিস্তানি সেনাদের গাড়ির লম্বা বহর পেছনে আসতে থাকে। এ অবস্থা দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের দল পিছু হটে গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় রাজাকার-দের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের অনুসরণ করে এবং বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে গুলি ছুড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। আতাহারের নেতৃত্বে গুলি করতে-করতে একদল মুক্তিযোদ্ধা বেরিয়ে যান। সালাউদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা তখনো গুলি করছিলেন। এক সময় তাঁদের গুলি ফুরিয়ে যায়। তখন পাকিস্তানি সেনারা এ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বুলেটের আঘাত আর আগুনে পুড়ে কমান্ডার সালাউদ্দিন ও তাঁর ৬ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন। খবর পেয়ে বিকেলে নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে <হেমায়েত উদ্দিন, বীর বিক্রম- ( হেমায়েত বাহিনী-র প্রধান)-এর নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল এবং গৌড়দিয়া ক্যাম্প থেকে ইলিয়াসের নেতৃত্বে আরো কিছু মুক্তিযোদ্ধা গুলি করতে-করতে অগ্রসর হন। একপর্যায়ে হেমায়েত উদ্দিন আহত হলে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন।
করিমপুর যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কাজী সালাউদ্দিন নাসিম, মেজবাউদ্দিন নৌফেল, আবদুল ওহাব,। সামসুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, মঈন উদ্দিন, আবদুল হামিদ ও মজিবুর রহমান। মোমিন ও তবিবুর রহমান নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মকভাবে আহত হন। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অপর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সামসুদ্দিন, ইদ্রিস মোল্লা, ডা. রুনু, আবু বকর সিদ্দিক, আমিনুর রহমান ফরিদ, কাজী ফরিদউদ্দিন, আকরাম আলী প্রমুখ। স্বাধীনতার পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আগুনে পোড়া দেহাবশেষ উদ্ধার করে আলীপুর গোরস্তানে দাফন করা হয়। [আবু সাঈদ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড