You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.03 | করটিয়া গণহত্যা (টাঙ্গাইল সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

করটিয়া গণহত্যা

করটিয়া গণহত্যা (টাঙ্গাইল সদর) সংঘটিত হয় ৩রা এপ্রিল থেকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত। এতে ২১ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তার দুপাশে করটিয়া গ্রাম। এখানে রয়েছে একটি প্রাচীন বাজার এবং সা’দত কলেজ। ১৯৭১ সালের ৩রা এপ্রিল সাটিয়াচড়া-গোড়ান এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর বিশাল এক বাহিনী ইপিআর, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে গুলিবর্ষণ করতে-করতে করটিয়া বাজারে প্রবেশ করে বাজারের প্রায় সবগুলো দোকানে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং যাকে সামনে পায় তাকেই হত্যা করে। এদিন তারা করটিয়া থেকে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে এসে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সা’দত কলেজে তাদের একটি ক্যাম্প স্থাপিত হয়। রাজাকার- দালালদের মাধ্যমে করটিয়া-করাতিপাড়াসহ আশপাশের গ্রামগুলো থেকে নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে তারা নির্যাতন শেষে হত্যা করত। করটিয়া এলাকার যেসব রাজাকার-দালালরা পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করে তাদের মধ্যে চরপাড়ার জাবেদ আলী খাঁ ও তার ছেলে হাতেম আলী খাঁ, সোনালীয়ার লেবু ড্রাইভারের নাম উল্লেযোগ্য। ৩রা এপ্রিল থেকে শুরু করে যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে করটিয়া-করাতিপাড়া ও পালপাড়া গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে পাকবাহিনী ২১ জন নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে, যা করটিয়া গণহত্যা নামে পরিচিত। এ গণহত্যায় শহীদরা হলেন- সুকানি (করটিয়া বাজারের সুইপার), বিশ্বনাথ রুদ্রপাল ওরফে পাইক্যা রুদ্রপাল (পিতা শ্রীমন্ত রুদ্রপাল, কর্মকার পাড়া), মধুসদন সাহা (পিতা নেধু লাল সাহা, করাতিপাড়া), ফণীন্দ্র মোহন সাহা (পিতা বিপিন বিহারী সাহা, করাতিপাড়া), হরিপদ সাহা (পিতা মতিলাল সাহা, করাতিপাড়া), বনজ কুমার সাহা রায় ওরফে লিটু (পিতা মণীন্দ্র মোহন সাহা রায়, করাতিপাড়া), নেধু চরণ পাল (করটিয়া বাজার), নগেন্দ্র মোহন পাল (পালপাড়া), জ্ঞানেন্দ্র মোহন পাল (পালপাড়া), লিচু মোহন পাল (পালপাড়া), রসিক কর্মকার (পালপাড়া), মফিল কারিগর (আব্বাস আলী কারিগর, কারিগর পাড়া), প্রাণেশ্বরী সাহা (স্বামী রাইমোহন সাহা, মধ্য সাহাপাড়া), হাছেন আলী শিকদার (পিতা আছর উদ্দিন শিকদার, গড়াসিন), সুরেশ চন্দ্র কর্মকার (হাফিজ মাহমুদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, করটিয়া), শাহাজাহানুর রহমান (সা’দত কলেজের বিকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, করটিয়া), কলিম উদ্দিন (করটিয়া), সেফাত আলী (পিতা সকেদ আলী, করটিয়া), গিরিবালা কর্মকার (স্বামী কালাচাঁদ কর্মকার, করটিয়া), পূর্ণলতা কর্মকার (পিতা কালাচাঁদ কর্মকার, করটিয়া) ও কালাচাঁদ কর্মকার (পিতা যাদব চন্দ্র কর্মকার, করটিয়া)। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড