কড়েহা আক্রমণ
কড়েহা আক্রমণ (গৌরীপুর, ময়মনসিংহ) পরিচালিত হয় ২১শে নভেম্বর। ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কড়েহা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণে বেশ কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়।
গৌরীপুর সদর থেকে ৮-১০ মাইল পূর্বদিকে কড়েহা গ্রামের অবস্থান। স্থানীয়ভাবে এ গ্রাম চল্লিশা কড়েহা নামে পরিচিত। এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মুসলিম লীগ নেতা জুবেদ আলী ও মাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ তালুকদারের বেশ প্রভাব ছিল। তাদের নির্দেশে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী প্রায়ই মওয়া ইউনিয়নে এসে নির্যাতন-নিপীড়ন চালাত।
২১শে নভেম্ভর এ দুই মুসলিম লীগ নেতার সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকবাহিনীর একটি দল চল্লিশা কড়েহা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে যায়। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মিজাজ উদ্দিন খান তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতিরোধ করতে যান। রাজাকার ও পাকবাহিনী আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিকেলে গৌরীপুরের দিকে ফিরে যাচ্ছিল। আগে থেকে মিজাজ উদ্দিন ও তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা চল্লিশা কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে একটি মাটির ডিবি ও ঝোপের আড়ালে এম্বুশে ছিলেন। হানাদাররা কাছাকাছি আসতেই মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। প্রথম আক্রমণেই ঘটনাস্থলে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। বাকি পাকসেনা ও রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসী যৌথভাবে তাদের ধাওয়া করে। জিডাই (সুরিয়া) নদীর পাড়ে পাকসেনা ও রাজাকাররা নিহত হয়। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে এ অক্রমণে নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, আব্দুল হাকিম, শামছুল হক, নুরুল ইসলাম, আব্দুল হাসিম, আব্দুর রশিদ, জবেদ আলী, হাছেন আলী, আব্দুস ছালাম তালুকদার, তোতা মিয়া, আব্দুর রহিম, গিয়াস উদ্দিন, আব্দুল খালেক, আবু সিদ্দিক, আমজাদ হোসেন প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড