You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক ওয়ালিউল হোসেন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক ওয়ালিউল হোসেন

ওয়ালিউল হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৩৯-১৯৭১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অলীউল বারী ও আলী হোসেন নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ সালের ২রা আগস্ট মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থানার দরিয়াপুর ইউনিয়নের মোনাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুজিবনগর থানা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উত্তরে মোনাখালী গ্রামের অবস্থান। ওয়ালীউল হোসেনের পিতার নাম কানাই শেখ এবং মাতার নাম আলফাতুন নেছা। তিনি মোনাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
ছোটবেলা থেকে ওয়ালিউল হোসেন সাহসী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। কেবল সাহসী নয়, তরুণ ওয়ালিউল হোসেন একই সঙ্গে বেশ রাজনীতি সচেতনও ছিলেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু আনসার বাহিনীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে।
তিনি এর আগে মুজাহিদ বাহিনীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে দেশে চলমান স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে রাজনীতি-সচেতন ওয়ালিউল হোসেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আনসার বাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি কুষ্টিয়া এলাকায় একাধিক প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ৩০শে মার্চ সংঘটিত কুষ্টিয়া প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করেন।
সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে ওয়ালিউল হোসেন ৮ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। তাঁর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম-। সাহেবনগর, কাজিপুর ও গাংগী থানা এ সাব-সেক্টরের অধীনে ছিল। কোম্পানি কমান্ডার লে. খন্দকার নুরুন্নবীর অধীনে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার ধর্মদহে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। ১২ই নভেম্বর পাকবাহিনী হঠাৎ এ ক্যাম্পে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। ফলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। এতে ওয়ালিউল হোসেন ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ফলে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয় ও তারা প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু হঠাৎ শত্রুপক্ষের গুলি ওয়ালিউল হোসেনের শরীরে বিদ্ধ হলে তিনি ঘটনাস্থলে শহীদ হন। সহযোদ্ধারা তাঁর মরদেহ ভারতের করিমগঞ্জে সমাহিত করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ওয়ালিউল হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪১৩, খেতাবের সনদ নম্বর ১৬৩)।
স্বাধীনতার পর শফিপুরস্থ আনসার একাডেমির একটি গেটের নাম শহীদ ওয়ালিউল হোসেনের নামে করা হয়। তাঁর গ্রাম মোনাখালীতে শহীদ অলীউল বারী আনসার বিজিবি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ব্যক্তি জীবনে ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জোবেদা খাতুন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড