You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এস এইচ এফ জে মানেক শ' - সংগ্রামের নোটবুক

এস এইচ এফ জে মানেক শ

এস এইচ এফ জে মানেক শ’, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, মিলিটারি ক্রস (১৯১৪-২০০৮)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান (১৯৬৯-১৯৭৩), মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী নিয়ে যৌথবাহিনী গঠন ও পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী, ৭১-এ সফল সামরিক নেতৃত্বদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত বাংলাদেশ উভয় দেশের সরকার কর্তৃক পদকে ভূষিত এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পূর্বে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত ভারতীয় জেনারেল।
স্যাম হরমুসজি ফ্রামজি জামশেদজি মানেক শ’ (স্যাম মানেক শ’ ও স্যাম বাহাদুর নামে জনপ্রিয়) ১৯১৪ সালের ৩রা এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নৈনিতালের শেরউড কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৩২ সালে তিনি ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৩৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন লাভ করেন। লাহোরে অবস্থানরত ব্রিটিশ ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের ২য় ব্যাটালিয়ন রয়েল স্কটসে সংযুক্তি সম্পন্ন করার পর তিনি বার্মায় (বর্তমান মায়ানমার) অবস্থানরত ৪র্থ ব্যাটালিয়ন ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে (৫৪ শিখ রেজিমেন্ট হিসেবে পরিচিত) যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তিনি ক্যাপ্টেন হিসেবে বার্মা যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে অগ্রসরমাণ জাপানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। এ-যুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘মিলিটারি ক্রস’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৪৩ সালের আগস্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত কোয়েটার কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজে ৮ম স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি ব্রিগেড মেজর হিসেবে রাজমাক ব্রিগেডে বদলি হন এবং ১৯৪৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি ১৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে পুনরায় নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীকালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে সেনাসদরে মিলিটারি অপারেশন অধিদপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি কর্নেল পদে এবং ১৯৫৭ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালের ২০শে জুলাই তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৬৩ সালে পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের ও পরের বছর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি-ইন-সি নিযুক্ত হন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ও দেশ সেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক ১৯৬৮ সালে তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৮ই জুন তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন এবং ১৯৭৩ সালের ১৫ই জানুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১লা জানুয়ারি তিনি ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় এ পদ অলংকৃত করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে স্যাম মানেক শ’ যুদ্ধ পরিচালনায় সার্বিক সামরিক নির্দেশনা, মুক্তিবাহিনী গঠন, প্রশিক্ষণ ও যৌথবাহিনী গঠনে বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজীকে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ ফিল্ড মার্শাল (অব.) এস এইচ এফ জে মানেক শ’-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। তিনি ২০০৮ সালের ২৭শে জুন মৃত্যুবরণ করেন। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড