You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম এস এম ইমদাদুল হক - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম এস এম ইমদাদুল হক

এস এম ইমদাদুল হক, বীর উত্তম (১৯৪৬-১৯৭১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৬ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মাটলা গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম এস এম এ মালেক এবং মাতার নাম রওশন নেছা। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
ইমদাদুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নড়াইল জেলার কালিয়ায়। কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। হন। খুলনা বি এল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে এয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের লয়ালপুর এয়ারবেসে কর্মরত অবস্থায় বিমান বাহিনী ছেড়ে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে (কাকুল) ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং সফলতার সঙ্গে কোর্স সমাপ্তির পর ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ইমদাদুল হক পশ্চিম পাকিস্তানে পেশোয়ার সেনানিবাসে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকবাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য সেনানিবাস থেকে পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এপ্রিল মাসে তিনি পেশোয়ার সেনানিবাস থেকে পালিয়ে করাচি এসে তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করেন মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ও তাঁর ১২ জন বন্ধু ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ভারতে এসে কলকাতাস্থ -মুজিবনগর সরকার-এর কাছে রিপোর্ট করেন। তাঁকে ত্রিপুরা রাজ্যে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি কোম্পানির কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হলে তিনি ‘জেড’ ফোর্সের অধীনে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন চার্লি কোম্পানি এবং প্রায় ৫০ জন গণবাহিনীর (এফএফ) সদস্য পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি টকিটল টি-গার্ডেন আক্রমণ করলে পাকিস্তান বাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ক্যাম্পটি মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল মৌলভীবাজার জেলার ধামাই চা-বাগান। এ ঘাঁটির মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক আধিপাত্য বিস্তার করে। সুতরাং ধামাই চা-বাগান আক্রমণ করে তা দখলে নেয়া কৌশলগত দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ধামাই চা-বাগান অপারেশনের দায়িত্ব পড়ে ইমদাদুল হকের ওপর। ৭ই নভেম্বর রাতে তিনি প্রায় ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনদিক থেকে ধামাই চা- বাগান ঘিরে ফেলেন। আক্রমণ শুরু করার পূর্বে তিনি সিগন্যালম্যানকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান রেকি করার জন্য ক্যাম্পের মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ-সময় পাকিস্তানি ক্যাম্পের কয়েকটি কুকুর তাদের আক্রমণ করলে পাকিস্তানি সৈন্যরা টের পেয়ে গুলি শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি করেন। ইমদাদুল হক অগ্রভাগে থেকে শত্রুদের বাংকারের সন্নিকটে পৌঁছে গ্রেনেড চার্জ করতে থাকেন। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে শত্রুবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক সময় পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকলে ইমদাদুল হক তাদের ঘাঁটি দখলে নিতে ভেতরে ঢোকেন। এমতাবস্থায় ক্যাম্পের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যের ব্রাশ ফায়ারে তিনি ঘটনাস্থলে শহীদ হন। এক পর্যায়ে শত্রুপক্ষের গোলাগুলি বন্ধ হলে তাঁর সহযোদ্ধারা ক্যাম্পে ঢুকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পরে তাঁকে এবং আরো দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চল্লিশধন কদমতলায় সমাহিত করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও জীবন উৎসর্গ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ এস এম ইমদাদুল হককে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং- ৩৩, খেতাবের সনদ নং- ২৬)। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড