You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক এম এ সরকার - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক এম এ সরকার

এম এ সরকার, বীর প্রতীক (১৯৪২-১৯৭৭) কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একটি সেকশনের দলনেতা। তাঁর পুরো নাম মাহতাব আলী সরকার। তিনি ১৯৪২ সালের ৭ই মে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের বাংলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বশিরউদ্দিন সরকার, মাতার নাম সখিমননেছা। পারিবারিক কারণে এম এ সরকার পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি নেন। ১৯৬৯ সালে পিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন এবং পড়াশুনা শুরু করেন।
এম এ সরকার ১৯৭১ সালে এইচএসসি-র ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজও করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২৮শে মার্চ রংপুর সেনানিবাস আক্রমণে অন্যদের সঙ্গে তিনিও ছিলেন। কিছুদিন পর ভারতে দার্জিলিং গিয়ে মুজিব ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন সাহেবগঞ্জ সাব- সেক্টরে, পরে পাটগ্রাম সাব-সেক্টরে যোগ দেন। হাতীবান্ধা, কাকিনা, বড়খাতাসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। তিনি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বাউলাগঞ্জ মাদ্রাসা মাঠে ১৩ই জুলাই সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের (সেকশন) দলনেতা ছিলেন। তুষভাণ্ডার যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য তিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে নভেম্বর মাসের শেষদিকে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানার (বর্তমানে উপজেলা) তুষভাণ্ডারে অবস্থিত পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘাঁটিতে এম এ সরকারের নেতৃত্বে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণ করেন।
পাটগ্রাম, বড়খাতা ও হাতীবান্ধা তখন মুক্ত। মিত্রবাহিনী র সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি অংশ লালমনিরহাটের উদ্দেশে অগ্রসর হয়। একটি অংশ তুষভাণ্ডার মুক্ত করতে থেকে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে তুষভাণ্ডার আক্রমণ করার জন্য রওনা হন। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন এম এ সরকার। তিনি তাঁর দল নিয়ে সবার আগে গিয়ে হানাদারদের ওপর আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য দল তখনো বেশ দূরে ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। এম এ সরকারের সহযোদ্ধারা একে-একে শহীদ হতে থাকেন। তিনি মনোবল না হারিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান। তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করে আক্রমণ করতে থাকেন যাতে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে না পারে যে, তিনি একাই লড়াই করছেন। ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধদের আরেকটি দল এসে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হলে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু হয়। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও যোগ দেয়। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষত তুষভাণ্ডারের যুদ্ধে সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এম এ সরকারকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৭৭ সালের ৩রা আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী মোসা. মঞ্জুয়ারা বেগম। এ দম্পতির ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড