বীর প্রতীক এম এ হালিম
এম এ হালিম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) প্লাটুন কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ৩০শে জুন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. আবদুল কুদ্দুস, মাতার নাম জোবেদা খাতুন। এম এ হালিম ১৯৭১ সালে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। ছাত্র অবস্থা থেকে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। ৬- দফা, ১১-দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলন-এ তিনি সক্রিয় ছিলেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরু এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর এম এ হালিম এলাকার ছাত্র-যুবকদের নিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রতিরোধযুদ্ধের পর এলাকার কয়েকজন তরুণসহ তিনি ভারতের রেঙ্গুয়া বাজারে চলে যান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে যোগ দেন। সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ইকো-১ ট্রেনিং সেন্টারে। এক মাসের ট্রেনিং শেষে তাঁকে ৫ নম্বর সেক্টরের বালাট সাব-সেক্টরে পাঠানো হয়। অচেনা এ এলাকায় এক যুদ্ধে তিনি আহত হন এবং কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ হন। বালাট এলাকা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না থাকায় পরে তাঁদের নিজ এলাকায় পাঠানো হয়। এম এ হালিমসহ ৭৩ জন মুক্তিসেনা শেলা সাব-সেক্টরে যোগ দেন। এখানে এম এ হালিম শেলা সাব-সেক্টরের একটি কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্ব পান। তাঁরা “হিট এন্ড রান’ পদ্ধতিতে পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান লক্ষ করে গুলি ছুড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতেন। অতঃপর পাকিস্তানিরা এক নাগারে গুলি চালাতে থাকত। গুলি থামলে তাঁরা আবার গুলি করতেন। তিনি দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা, নরসিংপুর, আলীপুর, হাছনবাহার, বালিউড়া, ছাতকের হাদাটিলা, দুরবিনটিলা এলাকায় একাধিক যুদ্ধে অংশ নেন।
১৩ই অক্টোবর এম এ হালিমের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের জাউয়া সেতু উড়িয়ে দেয়া হয়। এ অপারেশনের একদিন আগে দুই মুক্তিযোদ্ধাকে মাদ্রাসার ছাত্র সাজিয়ে তাঁদের সঙ্গে কুলি হিসেবে সিলেট-সুনামগঞ্জ জাউয়া সেতু রেকি করতে যান এম এ হালিম। সেতুর ওপর গিয়েই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা নিজেদের মধ্যে তর্ক জুড়ে দেন। এ-সময় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তাঁদের কাছে এসে কী হয়েছে জানতে চায়। ছাত্রবেশে দুই মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে দেখিয়ে বলেন, ‘এই কুলির বাচ্চা বলেছিল মালপত্র নিয়ে মাদ্রাসা পর্যন্ত যাবে। এখন মাঝপথে এসে বলছে, যাবে না।’ এর ফাঁকে এম এ হালিম পুরো সেতু রেকি করে ফেলেন। পাকিস্তানিরা তাঁকে ধমক দিয়ে বিদায় করে দেন। পরদিন মাইন বিস্ফোরণে সেতুটি তাঁরা ধ্বংস করেন। এ সফল অপারেশনের পর সেক্টর কমান্ডার তাঁদের পুরস্কৃত করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এম এ হালিমকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি কর্ণফুলী পেপার মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। এ দম্পতির ১ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে। [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড