বীর প্রতীক এ কে এম ইসহাক
এ কে এম ইসহাক, বীর প্রতীক (১৯৪৪-২০১০) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালের ১লা ডিসেম্বর যশাের জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ধলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. মজিবুর রহমান মােল্লা এবং মাতার নাম মাহমুদা খাতুন। এ কে এম ইসহাক কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ ভর্তি হন। বুয়েট-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। ষাটের দশকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ছাত্র-জনতার প্রতিটি আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
৭১-এ এ কে এম ইসহাক বর্তমান রাঙ্গামাটি জেলার চন্দ্রঘােনায় কর্ণফুলী পেপার মিলসে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনচেতা ও সাহসী ইসহাক চাকরির সময় থেকেই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রয়ােজনে যুদ্ধ করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মার্চে তিনি স্থানীয় ছাত্র-যুবক-শ্রমিকদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তােলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘােষণা করলে তিনি তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সশস্ত্র দলে রূপান্তরিত করেন। তাঁর কর্মস্থল কর্ণফুলী পেপার মিলসের নিরাপত্তা বিভাগে থাকা সকল অস্ত্র তিনি তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি, রামগড় ইত্যাদি স্থানে পাকহানাদার বাহিনী, পাকিস্তানপন্থী ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) সদস্য ও মিজোদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ২৭শে এপ্রিল মহালছড়িতে তাঁর দলের সঙ্গে পাকবাহিনী ও মিজোদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এযুদ্ধে পাকসেনা ও মিজোদের অনেকে হতাহত হয়। ২রা মে ইসিহাক তাঁর দল নিয়ে রামগড়ে পাকসেনা ও মিজোদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রতিরােধ ভেঙ্গে পড়ে। এরপর তিনি ভারতের আগরতলার হরিণা ক্যাম্পে যান। হরিণায় মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্স স্থাপিত হলে ইসহাককে সেখানে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল নিযুক্ত করা হয়। এ দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার এ কে এম ইসহাককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যােগ দেন। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কোহিনুর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, পাকশি পেপার মিলস, কর্ণফুলী পেপার মিলস ও খুলনা নিউজপ্রিন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি বিসিআইসি-র চেয়ারম্যান হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ৬ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম লুহ্ন নেছা ইসহাক। এ কে এম ইসহাক ২০১০ সালের ৫ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড