You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.03 | উলিপুর থানা আক্রমণ (উলিপুর, কুড়িগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

উলিপুর থানা আক্রমণ

উলিপুর থানা আক্রমণ (উলিপুর, কুড়িগ্রাম) ৩-৫ই ডিসেম্বর পরিচালিত হয়। এ আক্রমণের ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায় এবং ৫ই ডিসেম্বর উলিপুর থানা হানাদারমুক্ত হয়।
নভেম্বর মাসের শেষদিকে মুক্তিযােদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে তারা পালাবার পথ খুঁজতে থাকে। কুড়িগ্রাম থেকে ট্রেনযােগে পালাবার একমাত্র পথ রাজারহাট। প্লাটুন কমান্ডার আমিনুলের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল ১লা ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম-রাজারহাট রেল লাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত রেল লাইন উড়িয়ে দেন। পাকিস্তানি বাহিনী রেল লাইন মেরামত করে পালাবার পথ তৈরি করে। ২রা ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় বিশেষ করে কুড়িগ্রাম মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়, রেল স্টেশন ও পাকবাহিনীর ক্যাম্পগুলাের ওপর বােমা হামলা চালায়। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পাকবাহিনী পালাবার প্রস্তুতি নেয়।
৩রা ডিসেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা চাঁদ কোম্পানির নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে রাত ১২টায় উলিপুর থানা আক্রমণ করেন। ইতােমধ্যে হানাদার বাহিনী অপর ৩টি ক্যাম্প গুটিয়ে থানায় একত্রিত হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে সারারাত গােলাগুলি চলে। খবর পেয়ে ট্রেনযােগে কুড়িগ্রাম থেকে পাকসেনাদের একটি দল এসে উলিপুর থানায় যােগ দেয়। শত্রুর সংখ্যা ও শক্তি বৃদ্ধির কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে সেদিন উলিপুর থানা দখল করা সম্ভব হয়নি। পরদিন পাকসেনারা বেপরােয়া হয়ে উলিপুর বাজারের সর্বত্র তল্লাশি চালায়।
৫ই ডিসেম্বর মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েকটি কোম্পানি একত্রিত হয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পুনরায় উলিপুর থানা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাতে তারা চারদিক থেকে থানা ঘেরাও করেন। খবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন দুপুরে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ওয়ারলেস মারফত সকল ক্যাম্প প্রত্যাহার করার নির্দেশ আসে এবং সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনী (চিলমালী-উলিপুর-কুড়িগ্রামের) একটি শাটল ট্রেনে করে রংপুর পালিয়ে যায়। মুক্তিদ্ধোরা তখন বিজয় উল্লাসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ফাঁকা গুলি করতে-করতে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। এভাবে ৫ই ডিসেম্বর উলিপুরসহ কুড়িগ্রাম জেলা হানাদারমুক্ত হয়। [মনােরঞ্জন রায়]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড