ঊনসত্তরপাড়া গণহত্যা
ঊনসত্তরপাড়া গণহত্যা (রাউজান, চট্টগ্রাম) ১৩ই এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশনায় সংঘটিত হয়। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলা সদর থেকে ১৯ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত উনসত্তরপাড়া গ্রামটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। বিভিন্ন নির্বাচনে এ গ্রামের হিন্দু ভােটারদের পছন্দের প্রার্থীরাই জয়ী হতেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ-এর ভরাডুবি হলে এ গ্রামের হিন্দুরা ফজলুল কাদের চৌধুরীর রােষানলে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য স্থানের মতাে রাউজানেও স্বাধীনতাকামী মানুষদের ওপর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দুদের ওপর পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৩ই এপ্রিল সকাল সাতটায় তাদের একটি দল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশনায় হালদা নদীর সত্তার ব্রিজ পার হয়ে পশ্চিম গহিরার শিলপাড়ায় এবং পরে রাউজানের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ড চালায়। ফেরার পথে বিকেল ৪টার দিকে তারা উনসত্তরপাড়া ঘেরাও করে। এরপর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সতীশ মহাজনের বাড়ির পেছনে জড়াে করে বিভিন্ন বয়সের শতাধিক লােককে গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্য থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে নিয়ে স্থানীয়রা চিকিৎসা করে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৫০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন- যােগেশ চন্দ্র মহাজন (পিতা হরচন্দ্র মহাজন), রঞ্জিত কুমার মহাজন (পিতা যােগেশ চন্দ্র মহাজন), গােপাল চন্দ্র মালী (পিতা যােগেশ চন্দ্র মালী), বাবুল চন্দ্র মালী (পিতা গােপাল চন্দ্র মালী), সন্তোষ মালী (পিতা যােগেশ চন্দ্র মালী), উপেন্দ্র লাল ঘােষ (পিতা দুর্গা চরণ ঘােষ), মনােরঞ্জন ঘােষ (পিতা খগেন্দ্র লাল ঘােষ), অভিমন্যু পাল (পিতা রমেশ চন্দ্র পাল), পাখিবালা পাল (পিতা অভিমন্যু পাল), বেণী মাধব পাল (পিতা বামাচরণ পাল), তারাপদ পাল (পিতা বেণী মাধব পাল), ধীরেন্দ্র লাল পাল (পিতা রমেশ চন্দ্র পাল), বিরােজা বালা পাল (পিতা খগেন্দ্র লাল পাল), হিমাংশু বিমল পাল (পিতা বংশী বাদন পাল), সতীশ চন্দ্র পাল (পিতা হরিষ চন্দ্র পাল), সুপ্রিয় পাল (পিতা যােগেন্দ্র লাল পাল), দুর্গা চরণ পাল (পিতা অখিল চন্দ্র পাল), শান্তি বালা পাল (পিতা দুর্গা চরণ পাল), নিকুঞ্জ বিহারী পাল (পিতা নবীন চন্দ্র পাল), চন্দ্র কুমার পাল (পিতা নিকুঞ্জ বিহারী পাল), বলরাম পাল (পিতা জয় চন্দ্র পাল), শ্রীরাম পাল (পিতা জয় চন্দ্র পাল), ফণীন্দ্র লাল পাল (পিতা রজনী পাল), বলরাম পাল (পিতা মহেশ চন্দ্র পাল), তারা চরণ পাল (পিতা মহেশ চন্দ্র পাল), পুলিন বিহারী পাল (পিতা নিমাই চন্দ্র পাল), নিকুঞ্জ বিহারী পাল (পিতা রমেশ চরণ পাল), উত্তমা বালা পাল (পিতা পুলিন বিহারী পাল), নকুল চন্দ্র পাল (বেতাগী, রাঙ্গুনীয়া), হেমন্ত কুমার পাল (পিতা সতীশ চন্দ্র পাল, দক্ষিণ কাট্টলী), ধীরেন্দ্র লাল চৌধুরী (পিতা গুরুদাস চৌধুরী), নির্মল চন্দ্র চৌধুরী (পিতা মাধব চৌধুরী), মধুসূদন চৌধুরী (পিতা নির্মল চন্দ্র চৌধুরী), প্রতিমা দাশ (পিতা রঞ্জিত দাশ, বেতাগী, রাঙ্গুনীয়া), শান্তিপদ চৌধুরী (পিতা রেবতী রমণ চৌধুরী), নিরঞ্জন চৌধুরী (পিতা চন্দ্র কুমার চৌধুরী), বাবলু চৌধুরী (পিতা অঘাের চৌধুরী, আগ্রাবাদ), কৃষ্ণা চৌধুরী (পিতা বাবলু চৌধুরী, আগ্রাবাদ), মণিকুন্তলা চৌধুরী (স্বামী মণীন্দ্র লাল চৌধুরী), কৃষ্ণা চৌধুরী (পিতা অঘাের চন্দ্র চৌধুরী), শ্রী চৌধুরী (পিতা রেবতী রমণ চৌধুরী), স্বপন কুমার সেন, ক্ষেত্রমােহন রুদ্র (ফতেপুর), উমেশ চন্দ্র রুদ্র (ফতেপুর), রঞ্জিত কুমার রুদ্র (পিতা উমেশ চন্দ্র রুদ্র, ফতেপুর), ডা. নিরঞ্জন দত্তগুপ্ত (পিতা কিশােরী মােহন দত্তগুপ্ত), মণীন্দ্র লাল চৌধুরী, শক্তিপদ চৌধুরী (পিতা রেবতী রমণ চৌধুরী), নীরদ বরণ ঘােষ (পিতা রামমণি ঘােষ, খৈয়াখালি) ও বাদল চন্দ্র চৌধুরী। ২০১২ সালে সতীশ মহাজনের বাড়ির পেছনে প্রায় ৬০ গজ দূরে গৌরাঙ্গ হাটের উত্তর পাশে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। [আহমেদ আমিন চৌধুরী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড