You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক ঋত্বিক ঘটক - সংগ্রামের নোটবুক

ঋত্বিক ঘটক

ঋত্বিক ঘটক, পদ্মশ্রী (১৯২৫-১৯৭৬) ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক, কাহিনিকার ও অভিনেতা। তিনি ১৯২৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। দেশবিভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে যান (১৯৪৭)। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (১৯৪৬) ও বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৪৮)। তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করে অল্প সময়ের মধ্যে লেখক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তাঁর রচিত প্রথম নাটক কালাে সায়র এবং অভিনীত প্রথম নাটক নবান্ন (১৯৪৮)। ছিন্নমূল চলচ্চিত্রে অভিনয় ও সহকারী পরিচালনার মধ্য দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে (১৯৫০)। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নাগরিক (১৯৫২)। এই দুটি চলচ্চিত্রই ভারতীয় চলচ্চিত্রের গতানুগতিক ধারাকে বদলে দেয়। মধুমতি চলচ্চিত্রের (হিন্দি) কাহিনিকার হিসেবে তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনােনীত হন (১৯৫৮)। তাঁর রচিত ও পরিচালিত উল্লেখযােগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র- অযান্ত্রিক (১৯৫৮), মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), সুবর্ণ-রেখা (১৯৬২) ইত্যাদি। তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসকে কেন্দ্র করে একই নামে তিনি বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন (১৯৭৩)। তার নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র যুক্তি তক্কো আর গপ্পো (১৯৭৪) ভারতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত হন (১৯৭০)। ১৯৭৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঋত্বিক ঘটক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টিতে অবদান রাখেন। যুদ্ধ ও গণহত্যা তাঁকে প্রবলভাবে আলােড়িত করে। দুর্বার গতি পদ্মা প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তিনি বাঙালির সংগ্রামের চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সংগঠিত করে তিনি মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করতে সহায়তা করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঋত্বিক ঘটককে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ (মরণােত্তর) প্রদান করা হয় (১৫ই ডিসেম্বর ২০১২)। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড