স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘােষণাযুদ্ধ অনিবার্য, এই মহাসত্য অনুধাবন করতে পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ ১৯৭১ দিবাগত রাতে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘােষণা প্রদান করেন। ৭১-এর রক্তঝরা দিনগুলােতে বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতা ঘােষণাই জাতিকে একীভূত করেছিল মুক্তি ও স্বাধীনতার দাবিতে “This may be my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with that ever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.’ স্বাধীনতার এ চূড়ান্ত ঘােষণার পরপরই রাত ১.১০ টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ি ঘেরাও করে ব্যাপক গুলি বর্ষণ করে এবং তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে, পরবর্তী সময় পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী জেলে নিয়ে আটক করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর অন্তরীণ অবস্থায় অবরুদ্ধ বাংলাদেশের আপামর বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদে-প্রতিরােধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বাঙালির মুক্তির আকাক্সক্ষাকে চিরদিনের জন্য নস্যাৎ করার লক্ষ্যে ২৫ মার্চ রাতেই ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতায় মেতে ওঠে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। হত্যা এবং গণহত্যা চালায় রাজারবাগ, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, পুরনাে ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, শাখারীবাজার, রমনা কালীমন্দির এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। ঐ রাতে শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় প্রায় এক হাজার নিরস্ত্র প্রশিক্ষণার্থী বাঙালিকে। আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিকামী বাঙালিদের দমনের নামে শুরু হয় এই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। অভিযানের সূচনায় সেনাবাহিনীর প্রতি জেনারেল টিক্কার আদেশে বলা, ‘আমি মানুষ চাই না’, ভূমি চাই । International Commission of Jurists (ICJ)-এর রিপাের্টে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার প্রমাণ মেলে।
যেখানে অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস-এর বরাত দিয়ে বলা হয় Mascarenhas has recounted how the West Pakistan army systematically massacred tens of thousands of Bengalis. He described how one Major Iftihar set fire to a row of houses in a Hindu village and ruefully said on the following day I burnt only sixty houses, if it hadn’t rained I would have got the whole bloody lot’ These missions were officially known as ‘kill and burn missions’ The title is itself sufficient to show that they were a flagrant breach of the Geneva Conventions, (International Commission of Jurists, Report of the Commission of Inquiry into the events in East Pakistan, 1971 রাজাকার আল-বদরদের বর্বরতায় বিপন্ন মানবতা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানবতাবিরােধী এসব অপরাধে সহযােগিতার জন্য গঠন করা হয় রাজাকার, শান্তিকমিটি, আল-বদর, আল-শামস ও মুজাহিদবাহিনী। তারিক আলীর কথায় বিষয়টি আরাে স্পষ্ট হয় Operation Searchlight was brutal, but ineffective. Killing students and intellectuals did not lead to the quick and clear victory sought by the Pakistani generals. Once the initial attack had failed, the military with the help of local Islamist volunteers (members of the Jamaat-e-Islami) began to kill Hindus there were 10 million of them in East Pakistan- and burn their homes. Tens of thousands were exterminated. There were war crimes according to any interntional law. [Tariq Ali, The Duel- Pakistan on the flight path of American Power, P.83]
এসব বাহিনী স্থানীয় পর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চোখ ও কান হিসেবে কাজ করতাে। নির্যাতন ও অগ্নিসংযােগের মাধ্যমে মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তার পাশাপাশি এসব বাহিনী মেতে ওঠে হত্যা এবং গণহত্যায়। প্রায় এক কোটি বাঙালিকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। দেশত্যাগের সরাসরি ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ABC, NBC এবং CBS চ্যানেলে প্রচারিত হয়। ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ABC News-এ সাংবাদিক Lou Cioffi-র প্রতিবেদনে এর ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। There are more than seven million refugees now. It will probably reach ten million before long. The Indian Government is trying to impress the Senator with the urgency of the problem and also with the massive proportions of the relief effort an effort they cannot handle alone. Probably the most dramatic part of Senator Kennedy’s visit to India came when he actually watched several boatloads of refugees crossing from East Pakistan into India. Iliey came in small flood boats from an area that is controlled by free Pakistan. Lou Cioffi, ABC
News, near Calcutta. মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার সহযােগী বাহিনীসমূহ যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হয়েছিল, তখন স্বাধীন বাঙালির জ্ঞানভিত্তিক বিকাশের সম্ভাবনা পুরােপুরি ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে।
এই বিষয়ে ICJ-র রিপাের্টে বলা These murders were perpetrated by members of Al Badr, a Bengali organisation which came into being after 25 March, 1971, and which is believed to have been the action section of Jarnaat-e-Islam, the extremist Muslim. Their goal was to wipe out all Bengalis who advocated independence and the creation of a secular state. It has been alleged that the Al Badr raid, were directed by a group of Pakistani officers, who were said to have approved the list of those to be assassinated. The Al Badr raids were carried out at night, the victims being led away blindfolded at gun point, never to return. Many were taken to the Dacca College of Physical Education building. A janitor, at the College staled “They brought in hundreds of people, all nicely dressed and tied up. We could hear the screaming all the time from the rooms/ [International Commission of Jurists, Report of the Commission of Inquiry into the events in East Pakistan, 1971]
৭১-এর পুরাে নয় মাসই জামায়াতে ইসলামী, শান্তিকমিটি, আল-বদর ও আলশামস বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলকে দমন করার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে তাদের ভিকটিমদের চিহ্নিত করতাে। ভিকটিম নির্ধারণে সহযােগী। বাহিনীসমূহ এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একই ধরনের বিবেচনা ও মাপকাঠি অনুসরণ করতাে। তারা ধর্ম, জাতি, জেন্ডার, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে সম্পৃক্ততা, এবং অনেক ক্ষেত্রে বয়সের উপর ভিত্তি করেও তাদের ভিকটিম নির্ধারণ করতাে। ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে তারা মুসলিম নয়, এমন জনগােষ্ঠীকে বিশেষ করে হিন্দুদের ভিকটিম হিসাবে বাছাই করত। এর কারণ ছিল তাদের ধর্মভিত্তিক বৈষম্যমূলক মনােভাব, যার জন্য তারা মনে করতাে যে, তৎকালীন দখলকৃত বাংলাদেশে যদি অমুসলিম বা হিন্দু জনগণ থাকে, তাহলে এ ভূখণ্ডের মানুষ সাচ্চা মুসলমান হতে পারবে না। এছাড়া মুসলিমদের মধ্যে যারা তাদের তথাকথিত সাচ্চা মুসলমান ছিল না তাদেরকে তারা ভিকটিম হিসাবে নির্বাচন করতাে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সকল ঘৃণ্য অপরাধের আরেকটি ভিকটিম ছিল বাংলাদেশের নারীসমাজ। যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের নারীরা ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়। এর একদিকে যেমন ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযােগীদের ধর্মীয় সংকীণ মনােভাব, তেমনি তারা মনে করতাে যে, যেহেতু তারা পাকিস্তানকে রক্ষা করার তথাকথিত ‘জিহাদে’ লিপ্ত, তাই তারা নারীদের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা নারীদের গণিমতের মাল হিসাবে গণ্য করতাে এবং অমুসলিম কিংবা সাচ্চা মুসলমান নয়, এমন নারীদের ধর্ষণের জন্য বেছে নেয়া হতাে তাদের তথাকথিত সাচ্চা মুসলমান বানানাের। উদ্দেশ্যে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার আল-বদরদের আরেক শ্রেণির ভিকটিম ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত মানুষজন। তারা আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের শত্রু আর ভারতের দালাল মনে করতাে। এজন্য তারা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের লােকদের তথাকথিত ‘দুষ্কৃতিকারী’, রাষ্ট্রবিরােধী, ভারতের দালাল’, ‘ভারতের চর’ হিসাবে উল্লেখ করে তাদের হত্যার যড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।
মানবতাবিরােধী অপরাধে ইসলামী ছাত্র সংঘের সংশ্লিষ্টতা
১৯৭১ সালে প্রধানত ইসলামের ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়েই গঠিত হয় আল-বদর বাহিনী। ১৯৭১ সালের ৮ জুলাই দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত ইসলামী ছাত্র সংঘের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানাে হয় যে, আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদকে প্রাদেশিক ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক নিয়ােগ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট ছিলাে মতিউর রহমান নিজামী। ইসলামী ছাত্র সংঘের সাথে আল-বদর বাহিনীর সম্পর্ক নিয়ে এক রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়, ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতৃবৃন্দকে আল-বদর বাহিনী গঠন সম্পর্কে ১১ সেপ্টেম্ব কার্জন হলে ‘কায়েদে আযম স্মৃতি প্রদর্শনীতে জামায়াত নেতা গােলাম আযম বলে, ‘পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ের মতাে আজকে আবার পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্যে নতুন কর্মী বাহিনীর প্রয়ােজন।’ পরবর্তী সময় সে ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীবাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করে আশা প্রকাশ করে যে, এই কর্মী বাহিনীই কায়দে আজমের মহান পাকিস্তানকে চিরস্থায়ী করতে সক্ষম হবে। দৈনিক সংগ্রাম, সেপ্টেম্বর ১২, ১৯৭১) ইসলামী ছাত্র সংঘই যে আল-বদর বাহিনী গঠনের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে, তার একটি পরিষ্কার চিত্র উঠে আসে ১৯৭১ সালের সময়কার *Fortnightly Report on Political situation, 1971 from Speical Branch, East Pakistan, Dacca’ (1 1 43 FETCATCH ‘Activities of Islami Chhatra Sangha (ICS)’ প্রসঙ্গে বলা হয়।
On 17-10-71, a Conference (100) of Pakistan ICS, Rangpur Branch was held in Rangpur Town with A.T.M. Azharul Islam (ICS) in the Chair. Amongst others: Ali Ahsan Md. Mujahid, Acting President EPICS addressed the Conference explaining the present situation of the country and urging the party workers to mobilise the youths of Islamic spirit and launch strong movement against anti-Islamic activities. He also urged them to form Al-Badr Bahinis at different levels for defending the country from internal and external attack. East Pakistan Police Abstract of Intelligence-a 93 FTITS ‘সময়কার রিপাের্টেও সরাসরি প্রমাণ মেলে যে, প্রধানত ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীরাই আল-বদর বাহিনীতে যােগ দেয়। এমন একটি রিপাের্টে বলা হয় –
On Septembor, 1971 between 16.00 hours and 18.00 hours, a meeting of the workers of the ICS, Sylhet was held at Sarada Hall, Sylhet town where members of the Islamic Chhatra Sangha (ICS) delivered speeches urging upon the workers to work hard for the integrity of Pakistan and to join, in large number, the training course imparted by the Pakistan Army. These workers, after the training, will be known as Al-Badr Bahini and their duty will be to watch and check the activities of the rebels.
ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং আল-বদর বাহিনীর কর্মক্ষেত্র ও লক্ষ্য যে আসলে এক ও Sa u 14 CACT ‘East Pakistan Police Abstract of Intelligence’ FCPICI 69216 4919
At the instance of Islami Chhratra Sangha and Al-Badr party, Myemensingh, a reception meeting (200) of the SSC Examinees was held on 26th July, 1971 at Pakistan Art Council Hall, Myemensingh town with Akhtaruzzaman, President City ICS, Myemensingh, in the chair. In the course of their speeches, the speakers welcomed and praised the examinees who appeared at the examination in spite of threatenings and other hindrances. They appealed to the students to remain alert about the activities of the miscreants.
১৯৭১ সালের তৎকালীন ‘Fortnightly Report on Political Situation, 1971 from Special Branch, East Pakistan, Dacca’-99 WIIG রিপাের্টে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপরাধমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে ইসলামী ছাত্র সংঘের মনােভাব পরিষ্কার হয়ে যায়। সেখানে বলা হয়।
In a meeting (1000) of Islami Chhatra Sangha (ICS) held on 14.6.71 at Jamalpur, Matiur Rahman Nizami, President, All Pakistan ICS and others delivered speeches in course of which they condemned Awami League and praised the Pakistan Army for its timely action. They advised the people to follow the principles of Islam and co-operate with the Army. শান্তিকমিটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে গড়ে ওঠা শান্তিকমিটি ছিল একটি criminal organization, যা ২৫ মার্চ Operation Searchlight-এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী ও তাদের সহযােগী গােষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের সূত্র ধরেই গঠিত হয়। এই শান্তি কমিটি আবার Peace Committee নামেও পরিচিত ছিল। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের প্রাথমিক কার্যক্রমের অব্যবহিত পরে ৪ এপ্রিল ১৯৭১ পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) সভাপতি নুরুল আমিনের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি দল ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জে. টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাত করার মাধ্যমে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব। করে। এ দলের একজন অন্যতম সদস্য ছিলাে জামায়াতে ইসলামীর আমীর। গােলাম আযম। এই সাক্ষাত সম্পর্কে দৈনিক আজাদ, দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক পাকিস্তানে ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিলের রিপাের্টে বলা হয়। নুরুল আমিন ছাড়াও খাজা খয়েরউদ্দিন, গােলাম আযম, শফিকুল ইসলাম, মাওলানা নুরুজ্জামান ও মৌলভী ফরিদ আহমদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এই প্রতিনিধিদলে ছিলাে। নেতৃবৃন্দ প্রদেশে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের মন থেকে অহেতুক ও ভিত্তিহীন শঙ্কা দূর করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নাগরিক কমিটি গঠন করার জন্য সামরিক আইন প্রশাসকের নিকট প্রস্তাব করে। ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বলতে এখানে এমন একটি পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে যেখানে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেকোনাে মূল্যে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের দমন করবে।
৯ এপ্রিল ১৯৭১, ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক শান্তিকমিটি গঠন করা হয়। যার আহ্বায়ক হিসাবে খাজা খয়ের উদ্দিনকে মনােনীত করা হয়। ‘শান্তিকমিটি গঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে তাদের ঘৃণ্য অপরাধমূলক কাজে সহযােগিতা প্রদান। করা। এই উদ্দেশ্য-কমিটির নেতাদের লে. জে. টিক্কা খানের সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন সাক্ষাত থেকে স্পষ্ট হয়, কারণ তারা ঐ সাক্ষাতগুলাের সময় ২৫ মার্চ operation Searchlight-এর প্রশংসা করে এবং পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর সাথে একাত্মতা পােষণ করে। শান্তিকমিটির তৎপরতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে মােহাম্মদপুরে কমিটির শাখা সংগঠন পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি সংরক্ষণ অ্যাকশন কমিটির ৯ আগস্ট ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ের সিদ্ধান্তসমূহের মাধ্যমে। সিদ্ধান্ত সমূহ হল।
১. উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এবং বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক বিষয় করতে হবে। বাংলা সাইনবাের্ড, নম্বর প্লেট ও নাম অপসারণ এবং সংস্কৃত ধরনের বাংলা অক্ষরের পরিবর্তে রােমান হরফ ব্যবহার করতে হবে।
২. যে কাফের কবি নজরুল ইসলামের ছেলেদের হিন্দু-বাংলা নাম রয়েছে তার রচনাসহ বাংলাসাহিত্য এবং সংস্কৃতির হিন্দু প্রভাবিত অংশ সমূহ বর্জন করতে হবে।
৩. পূর্ব পাকিস্তানে রেডিও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের শতকরা ৫০ ভাগ ব্যয় করতে হবে উর্দু অনুষ্ঠানের জন্য।
৪. আমাদের পবিত্র ভূমিতে পাকিস্তান-বিরােধীদের আসতে দেওয়া হবে না।
৫. বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতির কারণে বাঙালি সরকারি কর্মচারি, বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়ীদের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতে হবে (পরে তাদের সামরিক আদালতে বিচার করে হত্যা করতে হবে)।
৬. জাতীয় স্বার্থে উচ্চপদ থেকে বাঙালি অফিসারদের দু-বছরের জন্য অপসারণ করতে হবে।
৭. রাজাকার বাহিনীর বেতন এবং শান্তিকমিটির ব্যয় নির্বাহের জন্য হিন্দু সম্পত্তি। বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৮, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য সাহায্য প্রেরণ এবং উর্দুভাষী খাটি পাকিস্তানিদের মধ্যে বিতরণের জন্য সাইক্লোন বিধ্বস্তদের সাহায্য তহবিল ব্যবহার করতে হবে। শান্তিকমিটি বিভিন্ন মিটিং মিছিল ও জঙ্গি তৎপরতায় উৎসাহ দানের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এই সহযােগিতা প্রদানের জন্য খুব দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে, সহায়তায় ও তত্ত্বাবধানে জেলা, মহকুমা , থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়। এছাড়াও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযােগী বাহিনী হিসেবে শান্তিকমিটি রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামরিক সরকারের প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে তারা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় শান্তিকমিটির সদস্যগণ সভা সমাবেশের মাধ্যমে পাস্তিানের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের, তাদের ভাষায়; দুষ্কৃতিকারী আখ্যায়িত করে তাহাদের নির্মূল করায় সর্বপ্রকার সহযােগিতা করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানায়। শান্তিকমিটির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায় সেপ্টেম্বর ০৮, ১৯৭১ ওয়াশিংটন অনুষ্ঠিত Washington Special Actions Group Meeting Henry A. Kissinger Maurice Williams-এর কথােপকথনে। সেই কথােপকথনের একটি অংশ তুলে দেয়া হল Dr. Kissinger: Are the infiltrators mostly Hindu? Mr. Williams: Not necessarily. But the Urdu and the orthodox Moslems are more loyal to the Pakistan Government. They are being armed at the village level through what they call Peace Committees. They are the least experienced in leadership but are considered the most reliable by the central Government. These elements tend to be anti-Hindu, and this has generated fear and continued flight on the part of the Hindus. (Louis J. Smith and Edward C. Keefer (Ed.) Foreign Relations of the United States, 1969 1976 (Volume XI)
South Asia Crisis, -P. 396) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে শান্তিকমিটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও ১৯৭১ সালের বিভিন্ন পত্রিকায় উঠে আসে। যেমন, ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামের রিপাের্টে বলা হয়—পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল। কমান্ডের অধিনায়ক লে. জে. নিয়াজী রংপুর জেলার উত্তরে অবস্থিত ডােমারে শান্তি।
কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণ দানকালে জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের শত্রুদের প্রতিহত করার ব্যাপারে রংপুরের জনগণের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার কাজে নিয়ােজিত রাজাকারদের কথা উল্লেখ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলে আয়ােজিত এক আলােচনা সভায় জামায়াতে ইসলামী এবং কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নেতা গােলাম আযম পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও শান্তিকমিটির মধ্যে যােগসূত্র প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে। গােলাম আযম বলে, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে শান্তিকমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’ এছাড়া ঘরে ঘরে যেসব দুশমন’ রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করার উপরও সে গুরুত্ব আরােপ করে। [দৈনিক পাকিস্তান, আগস্ট ১৬, ১৯৭১) এটি সন্দেহাতীতভাবে দেখা যাচ্ছে যে, শান্তিকমিটি দখলদার পাকিস্তানি। সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা প্রদানের জন্য গঠিত হয়েছিল, আর এই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল দখলকৃত বাংলাদেশের ভূমি অর্জন করা, যা লে. জে. টিক্কা খানের আদেশ ‘আমি মানুষ চাই না, ভূমি চাই’ থেকে বােঝা যায়। সুতরাং এতে স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে যে এই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার মাধ্যমে শান্তিকমিটিও এই ভূখণ্ডের মানুষ নিধনে অংশগ্রহণ করেছিল। অতএব, শান্তিকমিটি দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযােগী বাহিনী (auxiliary force) হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি নিজেরাও সরাসরি মানবতাবিরােধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করে। জামায়াতে ইসলামীর মতাে রাজাকার বাহিনীর সাথেও শান্তিকমিটির একটি নিবিড় সম্পর্ক ছিল। রাজাকার বাহিনীর জন্য সদস্য বাছাই করার প্রক্রিয়ায় শান্তিকমিটি মুখ্য ভূমিকা পালন করতাে।
১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সহযােগী বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়েছিল রাজাকার বাহিনী। রাজাকার একটি উর্দু শব্দ এবং যার অর্থ স্বেচ্ছাসেবক হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ ভাবা হতাে। রাজাকার বাহিনীর কার্যাবলী ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলবদর নামক বইয়ে বলা হয় যে, রাজাকার বাহিনী পুলিশের সাথে সহযােগিতার ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে, অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সেতুসমূহের নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্বে নিযুক্ত থাকে। (সেলিম মনসুর খালেদ, আল-বদর পাব্লিকেশনস, ১৯৮৬, ১ম খণ্ড)। আবার এক পাকিস্তানি অফিসারের ভাষ্য অনুযায়ী –
The Razakars…should be specially helpful as members of rural communities, who can identify guerrillas (freedom fighters) (New York Times, July 30, 1971)
রাজাকার বাহিনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর গােলাম আযমের কথায়ই রাজাকার। বাহিনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। গােলাম আযম তার এক বক্তৃতায় বলে—জামাতে ইসলামীর লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ যুক্ত হয়েছিল শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সাথে, যা ছিল পাকিস্তানকে অখণ্ডিত রাখা অর্থাৎ পাকিস্তানকে রক্ষা…(দৈনিক পাকিস্তান, সেপ্টেম্বর ২৬, ১৯৭১)।
রাজাকার বাহিনী গঠনের ইতিহাস
রাজাকার বাহিনী গঠন সম্পর্কে এবং এর পাকিস্তান-পক্ষীয় নীতি সম্পর্কে ‘Sun Set at Midday’ বইয়ে পাওয়া যায়
… To face the situation Razakar Force, consisting of proPakistan elements was formed, this was the first experiment in East Pakistan, which was a successful experiment. Following this strategy Razakar Force was being organized throughout East Pakistan. (Mohiuddin Choudhury. sun set at Midday, p. 91)
১৯৭১ সালের মে মাসে, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মওলানা একেএম ইউসুফ খুলনার খান জাহান আলী রােডে অবস্থিত আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে সর্বপ্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করে। সেনাবাহিনীর চলাচল নির্বিঘ্ন করা, মুক্তিযােদ্ধাদের গতিবিধি, অবস্থান, চলাচল ইত্যাদি বিষয়ে খবরাখবর নেওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মে লে, জে, টিক্কা খান East Pakistan Ordinance 1971 স্বাক্ষর করেন যা ২ আগস্ট ১৯৭১ সালে জারি করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীকে আইনী মর্যাদা দেয়া হয় ১৯৪৮ সালের আনসার আইন বাতিল করার মাধ্যমে । ফলে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে পূর্ববর্তী আনসার বাহিনীকে বিলুপ্ত করে এর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি, মূলধন ও দায় এবং রেকর্ডপত্র রাজাকার বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
১৯৭১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি Ordinance জারি করা হয় যার ফলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদেরকে সরাসরি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধীনে আনা হয়। আনসার বাহিনীর অ্যাডজুটেন্টগণ রাজাকার অ্যাডজুটেন্ট হিসাবে নিযুক্ত হন। আর আনসার বাহিনীর অফিসারবৃন্দ রাজাকার অফিসার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আইনের আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের সকল সক্ষম ব্যক্তিকে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অস্ত্রে সজ্জিত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া পাকিস্তানের পক্ষের লােকদের এবং জামায়াতে ইসলামী ও শান্তিকমিটির সদস্যদের রাজাকার বাহিনীতে নিযুক্ত করা হয়। রাজাকারদের প্রশিক্ষণ হতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন মাঠ ও মােহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাঠে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতাে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল । দেড় থেকে দুই সপ্তাহ। প্রশিক্ষণের শেষে রাজাকারদের হাতে থ্রি নট থ্রি রাইফেল তুলে দেওয়া হতাে। এছাড়াও দেশের প্রত্যন্তসব জনপদেও প্রশিক্ষণ দেয়া হতাে। স্থানীয় রাজাকারদের। রাজাকার বাহিনী গঠন সম্পর্কে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল নিয়াজী বলেন—
The proposal for raising an organized Razakar Force remained under consideration with HQ CMLA and GHQ for a long time. Although their recruitment had started earlier, sanction for the raising of this foree was given at the end of August 1971- A separate Razakars Directorate was established, and the whole set-up started taking proper shape. Two separate wings called Al-Badr and Al-Shams were organized.
মানবতাবিরােধী অপরাধের সাথে রাজাকার বাহিনীর সম্পৃক্ততা
দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযােগী বাহিনী (auxiliary force) হিসাবে যে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল সে বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মেতে ওঠে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগসহ মানবতাবিরােধী সব অপরাধে। একটি সরকারি দলিলে যার প্রমাণ পাওয়া যায়। দলিল থেকে হুবহু তুলে দেয়া হল। The Razakars will assist police and law enforcing agencies in maintainance (sic) of law and order in their own areas. They may be called upon to augment police thanas when considered necessary and to arrest and apprehend rebels and miscreants. They will also prevent interference with communications and power lines, guard specific modal po (sic) V.PS, and patrol specified areas. They will also collect information. The Razakars are to be kept as far as possible in their own areas near their homes. It will be essential to differentiate functions of Razakars from that of that Village Defence parties which are basically voluntary bodies working in honorary capacity for defence and retain collective responsibility for their villages, their activities being co-ordinated through the Union councils.
রাজাকার বাহিনী যে হত্যা এবং গণহত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল তা লে. জে. টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাতের সময় পিডিপি’র সভাপতি নুরুল আমীনের বক্তব্য থেকেই বােঝা যায়। দৈনিক ইক্তেফাকে প্রকাশিত এই সাক্ষাতের সংবাদে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের রাজাকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাহাদের হাতে আরও অস্ত্র সরবরাহের জন্য সে প্রেসিডেন্টের নিকট প্রস্তাব করিয়াছেন। সে বলে যে, বর্তমানে রাজাকারেরা অত্যন্ত ভালাে কাজ করিলেও তাহাদের সকলে অস্ত্র সজ্জিত নয় । (দৈনিক ইত্তেফাক, নভেম্বর ০৭, ১৯৭১)
জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজাকার বাহিনীর সংযােগ
জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজাকার বাহিনীর ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় সম্পর্ক ছিল, যে কারণে বহু জামায়াতে ইসলামীর সদস্য এবং কর্মী যােগ দিয়েছিল রাজাকার বাহিনীতে। এই দুটি সংগঠনের সুস্পষ্ট এবং গভীর সম্পর্কের প্রমাণ মেলে ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক ইস্যুকৃত ID Card এ। এমন এক কপি ID Card এর নমুনা তুলে দেয়া হলাে
This is to certify that Mr. Haroon-ur-Rashid Khan Slo Abdul Azim Khan, 36, Purana Paltan Lane, Dacca-2 is our active worker. He is true Pakistani and dependable. He is trained Razakar, He has been issued a Rifle No 776… with ten round ammunition for Self Protection. Sd/ illegible INCHARGE Razakar & Muzahid Jamaat-e-Islami 91/92 siddique Bazar, Dacca জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজাকার বাহিনীর সংযােগ অন্যান্য আরাে ঘটনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় মূলত জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের নিয়েই । কারণ ১৯৭১ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ কে এম ইউসুফ খুলনার খানজাহান আলী রােডে অবস্থিত আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াতে ইসলামী কর্মী নিয়ে প্রথম রাজাকার বাহিনী গড়ে তােলে। রাজাকার বাহিনী যে জামায়াতে ইসলামী দ্বারা গঠিত হয়েছে তা পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান হায়াত মােহাম্মদ খান শেরপার বক্তব্য থেকেও বােঝা যায়। যেখানে সে অভিযােগ করে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে নিজেদের রাজনৈতিক বিরােধীদের খতম করার জন্যই জামায়াতে ইসলামী এই বাহিনী গঠন করেছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, নভেম্বর ১৮, ১৯৭১)
রাজাকার বাহিনী সংগঠনে শান্তিকমিটির ভূমিকা জামায়াতে ইসলামীর মতাে শান্তিকমিটির সাথেও রাজাকার বাহিনীর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে শান্তিকমিটিও ছিল জামায়াতে ইসলামীর মতাে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সহযােগি সংগঠন, যার একজন অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলাে গােলাম আযম। ২৫ মে ১৯৭১ সালের Government of East Pakistan, Office of the Sub-Divisional Officer, Netrokona একটি দলিলে লেখা আছে In every Union Council there shall be a party of 30 Razakars. These 30 Razakars are to be recruited by the local Chairman of Union Councils after consultation with the Convenor of the Union Peace Committees where there are Already Union Committees Governement of East pakistan, Home (Police And Ansars) Department Section-III নামক একটি দলিলেও এর প্রমাণ মেলে। Recruitment: The Razakars will be recruited in consultation with the members of the Peace Committees and Union Councils.
সূত্র : ফিরে-দেখা-৭১-যুদ্ধাপরাধীদের-বিচার-সুজন-হালদার