You dont have javascript enabled! Please enable it! ’মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত ঈপ্সিতা গুপ্তা - সংগ্রামের নোটবুক

ঈপ্সিতা গুপ্তা

ঈপ্সিতা গুপ্তা (১৯৩২-২০০৮) ভারতের শিক্ষিকা, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৩২ সালের ১০ই আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শিকারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বহরমপুর মহারানি কাশীশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। দেশব্যাপী আজাদ হিন্দ সেনানীদের মুক্তির দাবিতে যে দুর্বার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় (১৯৪৫), মুর্শিদাবাদ জেলায় এর নেতৃত্ব দেন তিনি। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের (Revolutionary Socialist Party- RSP) নেত্রী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫৪ সালে তিনি বহরমপুর মহারানি কাশীশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে যােগদান করেন। নারী ও বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিরলস সংগ্রামে লিপ্ত থাকা ছাড়াও তিনি দেশবিভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল শরণার্থীদের সেবা ও তাদের পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলনে আত্মনিয়ােগ করেন। ২০০৮ সালের ১লা জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর কর্মক্ষেত্রে গঠিত মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধা সহায়তা সমিতির সম্পাদিকা ঈপ্সিতা গুপ্তা বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশের আয়ােজন করেন। সমিতির তহবিল গঠনের জন্য তাঁর ডাকে বহরমপুর শহরের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের এক দিনের বেতন দান করেন। শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তিনি তা শরণার্থী শিবির-এ প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। শরণার্থী শিবিরে গমন করে তিনি দুঃস্থদের সেবা-শুশ্রুষা করেন। তাছাড়াও মুক্তিবাহিনীর শিবিরে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়ার পাশাপাশি তিনি দেশে ও বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতা, শরণার্থীদের জীবন ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতি দিতেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ ঈপ্সিতা গুপ্তা-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড