You dont have javascript enabled! Please enable it! ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল গণহত্যা (কুমিল্লা সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল গণহত্যা

ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর) ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফিরের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়। স্কুলের ১১ জন শিক্ষকসহ মােট ১৪ জন এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
ময়নামতি সেনানিবাস ইস্পাহানী স্কুল ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দিশিবির ও নির্যাতনকেন্দ্র। ২৫শে মার্চ গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী স্কুলের দোতলায় ময়নামতি সেনানিবাসে কর্মরত বাঙালি অফিসার ও কর্মচারীদের ৮০টি পরিবারকে আটকে রাখে। ২৯শে মার্চ সন্ধ্যায় মেজর সুলতান আহমদ খানের নেতৃত্বে একদল সৈন্য বাঙালি আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুলের উপাধ্যক্ষসহ ১১ জন শিক্ষককে জরুরি মিটিংয়ের অজুহাতে ধরে নিয়ে যায়। তাঁরা হলেন- আবুল কাসেম, আজিজুল হক, আবদুল জব্বার, তাজুল ইসলাম, শরফুদ্দিন আহমেদ, মােছলেহ উদ্দিন, আমির হােসেন, আবদুল মালেক, মফিজউদ্দিন ভূঁইয়া, খায়রুল বাসার ও আবদুল মান্নান। প্রথমােক্ত জন উপাধ্যক্ষ, শেষােক্ত জন ধর্মীয় শিক্ষক ও বিগ্রেড মসজিদের ইমাম, বাকি সবাই ছিলেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। হানাদার বাহিনী উপাধ্যক্ষের ছেলে (এমবিবিএস চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র) এবং শিক্ষক আবদুল জব্বারের ২ শ্যালক এ কে এম শামছি বাবজু (১৬)-কে ২৯শে মার্চ, মুনজের মুর্শেদ তরু (১৭)-কে ৩১শে মার্চ ধরে নিয়ে যায়। একদিন সকালে হানাদার বাহিনী এই ১৪ জনকে স্কুলের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশগুলাে পাহাড়ের গহ্বরে ফেলে দেয়।
পাকিস্তানি বাহিনী শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় বারবার তল্লাশি করতে থাকে। তারা ঘরের গহনাপত্র, টাকা-পয়সা সব নিয়ে নেয় এবং শাড়ি ও কাপড়চোপড় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তারা আবাসিক এলাকার পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব, বাচ্চাদের দুধের অভাব ইত্যাদি কারণে সেখানে পরিবারগুলাের পক্ষে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। শিক্ষকদের পরিবারগুলাের অধিকাংশ কৌশলে সেনানিবাস এলাকা থেকে পালিয়ে বাঁচে।
ময়নামতি সেনানিবাসের সবগুলাে গণহত্যা সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি সেনা অফিসার বিগ্রেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে। ইস্পাহানী স্কুলের শিক্ষক ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে ইস্পাহানী স্কুলের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মােহাম্মদ খান আমীন ও কুমিল্লা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অবাঙালি আলীম। মােহাম্মদ খান আমীন এপ্রিলে পাকিস্তানে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসে। মুক্তিযুদ্ধের পর মানবতাবিরােধী অপরাধের জন্য তাকে বন্দি করা হয়। [মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড