You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.25 | ঈদগড় যুদ্ধ (রামু, কক্সবাজার) - সংগ্রামের নোটবুক

ঈদগড় যুদ্ধ

ঈদগড় যুদ্ধ (রামু, কক্সবাজার) ২৫শে নভেম্বর সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে ১৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারনিহত এবং ৯ জন আহত হয়। অপরদিকে মুরংপাড়ার মুক্তিযােদ্ধা লাফ্রে মুরং শহীদ এবং ৫ জন আহত হন। এটি ত্রিশঢ়েবা নতুন মুরংপাড়া সম্মুখ যুদ্ধ নামেও পরিচিত।
কক্সবাজার জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঈদগড়ের ত্রিশঢেবা মুরুংপাড়ার যুদ্ধ সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। ঈদগড় নতুন মুরং পাড়ার অবস্থান গভীর জঙ্গলের অভ্যন্তরে। বার্মা থেকে দেশে প্রবেশের পর কক্সবাজারের মুক্তিযােদ্ধারা জোয়ারিয়ানালা ও ঈদগাঁও সেতুর অপারেশন শেষে মুরংপাড়াকে ক্যাম্প হিসেবে নির্বাচন করেন। ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর এখান থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ ও অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হতাে। নিরাপত্তার প্রয়ােজনে পাহাড়ের ওপরে মুরংপাড়াকে ঘিরে চারপাশে প্রতিরক্ষা বাংকার এবং উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী তিনটি অবজারভেশন পােস্ট তৈরি করা হয়। এছাড়াও ছিল বিভিন্ন ডিউটি ও এলার্ম পােস্ট।
ঈদগাঁও লাল ব্রিজে দ্বিতীয়বার সফল অভিযান শেষে অধিনায়ক আবদুস ছােবহানের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা নতুন মুরংপাড়া ক্যাম্পে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করেন। ঈদগাঁও লাল ব্রিজে হানাদার বাহিনীর বিপর্যস্ত হওয়ার খবর দ্রুত ইপিসিএএফ-এর ৬১তম ব্যাটালিয়ন সদরে পৌছে যায়। প্রতিশােধস্পৃহায় হানাদার সদস্যরা পাগলা কুকুরের মতাে হন্যে হয়ে এলাকার সাধারণ ও নিরীহ লােকজনের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। তাছাড়া মুক্তিযােদ্ধারা এ ক্যাম্পে ঈদের দিন ঈদগাঁও থেকে একজন মৌলভী এনে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঐ মৌলভী ক্যাম্পের ম্যাপ কক্সবাজারে অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের জানিয়ে দেয়।
২৩শে নভেম্বর ঈদগাঁও সেতু অপারেশন করার পর পাকিস্তানি বাহিনী নতুন মুরংপাড়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্প সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এরপর তা আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে। ২৫শে নভেম্বর সকালে উখিয়া থানায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সুবেদার মালেক তার দলবল, কক্সবাজারে অবস্থানরত সুবেদার বেনারস খা, দুই পশ্চিমা ক্যাপ্টেন ও মেজরের নেতৃত্বে ইপিসিএএফ-এর দুটি কোম্পানি এবং আলবদর, রাজাকার মিলে প্রায় হাজারেরও অধিক হানাদার সদস্য তিন দিক থেকে মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় মুক্তিযােদ্ধারা একদিন আগে অপারেশনে ব্যবহৃত অস্ত্র পরিষ্কার করছিলেন। হানাদারদের আগমনের খবর পেয়ে অধিনায়ক আবদুস ছােবহান সহযােদ্ধাদের সতর্কতা সংকেত বাজিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পজিশন নেয়ার নির্দেশ দেন। অধিনায়কের নির্দেশে মুক্তিযােদ্ধারা হানাদারদের ওপর গুলি ছুড়লে সকাল ১১টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযােদ্ধারা এক পর্যায়ে গুলি বর্ষণ বন্ধ করে কৌশল অবলম্বন করেন। এতে হানাদাররা মুক্তিযােদ্ধাদের ধরার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে থাকে। তারা কাছাকাছি চলে এলে মুক্তিযােদ্ধারা গুলি বর্ষণ শুরু করেন। এতে ৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ১০ জন রাজাকার নিহত ও ৯ জন আহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। অপরদিকে মুক্তিযােদ্ধা লাফে মুরুং হানাদারদের গুলিতে শহীদ এবং ৫ জন আহত হন। আহতদের মালুমঘাট ক্রিস্টান মেমােরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা এ সম্মুখ যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পিছু হটে। তবে ক্রোধ আর হতাশায় তারা ক্যাম্পের নিচে মুরংদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অভিযােগে মুরংপাড়ার অসহায় ও নিরীহ লােকজনকে হত্যা করে।
মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে এ-যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন দলীয় অধিনায়ক আবদুস ছােবহান এবং ডেপুটি কমান্ডার রামু উপজেলার সদর ফতেখারকূল ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়ার আবু আহমদ। এ-যুদ্ধে আরাে যারা অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা হলেননুরুল ইসলাম বাঙালি (ঈদগড়), সিরাজুল হক রেজা (ঈদগড়), নুরুল হক, হাশেম সরওয়ার, পরিমল বড়ুয়া, রমেশ বড়য়া, নুরুল হক, মােজাফফর আহমদ, কিরণ বড়ুয়া, নুরুল আমিন, আবদুল জব্বার, গােলাম কাদের, কবির আহমদ, সিরাজুল হক, মােহাম্মদ মােস্তফা, মােক্তার আহমদ, মধুসূদন দে, মঞ্জুর আলম, আবু আহমদ প্রমুখ। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড