You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম ইয়ামিন চৌধুরী - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম ইয়ামিন চৌধুরী

ইয়ামিন চৌধুরী, বীর বিক্রম (১৯৫০-১৯৯৬) যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালে সিলেট জেলার অন্তর্গত গােলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল হামিদ চৌধুরী (হামদু মিয়া) ও মাতার নাম সাইদুন বেগম।
ইয়ামিন চৌধুরী এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করে প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান। তিনি মেঘালয়ের ইকোওয়ান ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৫ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মীর শওকত আলীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। উক্ত সেক্টরে ডাউকি ও ভােলাগঞ্জ সাবসেক্টরের অধীন একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ও তাঁর কমান্ডের মুক্তিযােদ্ধারা অত্যন্ত সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। হিট এন্ড রান’ পদ্ধতি ছাড়াও তিনি কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন। ছাতক, গােয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেন।
জুন-জুলাই মাসে ইয়ামিন চৌধুরী সিলেটের সালুটিকর বিমানবন্দরে একটি অপারেশনে নেতৃত্ব দেন। এয়ারফিল্ডের কাছাকাছি একটি জলাশয়ে সেখানকার গ্রামবাসীদের অনেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরে থাকে। একদিন কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে ইয়ামিন চৌধুরী ও তার সহযােগী ৫ জন মুক্তিযােদ্ধা সেখানে বড়শি নিয়ে মাছ ধরার ভান করে বিমান অবতরণের অপেক্ষা করতে থাকেন। ঘণ্টা দুয়েক পর একটি অতিকায় সি-১৩০ বিমান আকাশে কয়েকটি চক্কর দিয়ে তাঁদের ১৫০-২০০ গজ দূরত্বে অবতরণ করে। বিমানটি থামার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধারা এলএমজি বের করে অতর্কিতে গােলাবর্ষণ শুরু করেন। এতে বিমানটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রহরায় থাকা পাকসেনারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়ামিন চৌধুরী তাঁর দল নিয়ে সেখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি নিয়ে পাইলট দ্রুত ঢাকার উদ্দেশে রওনা করলে সেখানে অবতরণের সময় সেটি বিধ্বস্ত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইয়ামিন চৌধুরীকে ‘বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শিলা চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ২৬শে জানুয়ারি এ বীর মুক্তিযােদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড